
লোহার মতো শক্ত কিন্তু প্লাস্টিকের মতো হালকা একধরনের নতুন পদার্থ আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞানীরা। পদার্থটি বুলেটপ্রুফ কাচের চেয়ে কয়েকগুণ শক্তিশালী। এটি দিয়ে গাড়ি বা প্লেনের বডি তো বটেই, এমনকি বহুতল ভবন ও সেতুর বড় বড় ব্লকও তৈরি করা যাবে। সবচেয়ে সুখবর, এটি খুব সহজে বাণিজ্যিকভাবেই উৎপাদন করা সম্ভব।
কালজয়ী এ আবিষ্কারের তথ্য গত সপ্তাহে পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত হয়েছে। এতে এমআইটির রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের কার্বন পি. ডাবস অধ্যাপক মাইকেল স্ট্রানো বলেন, আমরা সাধারণত প্লাস্টিককে ভবন বানাতে ব্যবহারযোগ্য বলে মনে করি না। কিন্তু এই উপাদানটির সাহায্যে আপনি নতুন জিনিস করতে পারবেন। এর অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং আমরা তা নিয়ে উৎসাহিত।
এমআইটির তথ্যমতে, তাদের আবিষ্কৃত নতুন পদার্থটি বুলেটপ্রুফ কাচের তুলনায় কয়েকগুণ শক্তিশালী। এটি ভাঙতে হলে লোহার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে, অথচ লোহার তুলনায় এর ঘনত্ব ছয় ভাগের এক ভাগ মাত্র।
বিজ্ঞানীরা পলিমার তৈরির নতুন প্রক্রিয়ার সাহায্যে অসাধারণ পদার্থটি আবিষ্কার করেছেন। রাবার বা কাচের মতো প্লাস্টিকও একধরনের পলিমার।
বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন, কোনোভাবে পলিমারের একটি দ্বিমাত্রিক ধরন তৈরি যায় কিনা, যার ফলে সেটি পালকের মতো হালকা হয়ে যায়। কয়েক দশক ধরে এ ধরনের পদার্থ তৈরির চেষ্টা করে অবশেষে সফল হয়েছেন তারা।
পলিমার মূলত কিছু স্বতন্ত্র অণুর শৃঙ্খল, যা রাসায়নিক বন্ধনের সাহায্যে সংযুক্ত থাকে। এগুলোকে মনোমার বলা হয়। স্বাভাবিকভাবে যখন পলিমার তৈরি হয়, সেটি ফুলেফেঁপে ত্রিমাত্রিক আকার ধারণ করে, যেমনটা মাইক্রোওভেনে কেক তৈরির ক্ষেত্রে দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যদি মাত্র একটি মনোমারও ঘুরতে শুরু করে করে, তাহলে পলিমারটি ত্রিমাত্রিক হয়ে যায়।
ধরুন, আপনি একদল শিশুকে বড় একটি অডিটোরিয়ামে সামনে দু’হাত তুলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করাতে চান। এদের মধ্যে যদি একটি শিশুও আপনার কথা না শুনে ঘুরে দাঁড়ায়, তবে গোটা শৃঙ্খলা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।
বিজ্ঞানীরা সে বিষয়টি মাথায় রেখে সবগুলো মনোমারকে একই সারিতে বাড়তে দিয়ে একটি পলিমার শৃঙ্খল তৈরি করেন। এরপর সেগুলো ডিস্কের মতো একটির ওপর আরেকটি সাজিয়ে তৈরি করেন বহু আকাঙ্ক্ষিত দ্বিমাত্রিক পলিমার।