
সাকিবুর রহমান
গল্লামারি ব্রিজের একাংশ ভেঙে ফেলার পর অধিকাংশ দিনই সিএনজি চালকরা যাত্রী নামিয়ে দেয় ব্রিজ পার না করেই, প্রায়শই হেঁটে পাড়ি দিতে হয় ছোটখাটো ব্রিজটি। সেদিনও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। হেঁটে পার হবার জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই দেখা আতিউরের সাথে। বছর পনেরোর কিশোর। অথচ দেখলে ঠাউর করতে কষ্টই হয়। কৈশোরের সেই সারল্যতার স্থলে মুখে জায়গা করে নিয়েছে দৃঢ়তা। সাথে অকৃত্রিম হাসি।
আতিউর বসেছিলো তালের কাদি নিয়ে। জুনের ভ্যাপসা গরমে যেখানে নাভিশ্বাস উঠে যায়, সেখানে বেলা বারোটার টনটনে রোদে সে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে তাল শাঁস। রোদ থেকে বাঁচতে সহায় কেবল মলিন জীর্ণ একটি রঙচটা গামছা। তাল কেনার জন্য না, তবে এগিয়ে গেলাম তার দিকে তাল কেনার অজুহাতে।
-তাল নরম হবে তো? বললাম আমি।
-একটা কাইটে দিই খেয়ে দেখেন, বললাম পরে দিও।
-তা এত রোদে কষ্ট হচ্ছে না? আমি জানি প্রশ্নটাই অমূলক, বিশেষত এমন একজনের কাছে যে কিনা চোখের সামনে কাঠফাটা রোদে পুড়ছে।
-কষ্ট তো হয় কিন্তু এই জায়গায় বিক্রি হয় ভালই।
-কোথা থেকে আনো তালগাছ আছে নাকি ? আতিউর জানায় সে মহাজনের তাল পেড়ে দেওয়ায় তাকে এক কাদি করে দেয়। সেটাই সে বিক্রি করতে নিয়ে আসে।
আমি আর কথা বাড়ালাম না সেদিন। আতিউরের সাথে আবার দেখা হলো ঈদের দিন দুয়েক আগে। এবার দেখা ব্রিজের পশ্চিম পাশে। ডিমের ঝাকি নিয়ে বসে আছে। আমি ফিরছিলাম অফিস থেকে সন্ধ্যার কিছু আগে।
কুশলাদি বিনিময় হল সংক্ষেপে। আতিউর মুখে সেই চিরচেনা হাসি।
পরশু তো ঈদ কি কিনলে?
ঈদের দিন আর বাকি দিন সমান আমার কাছে, আতিউরের কথায় একরাশ দুঃখ।
কথায় কথায় জানলাম ওর দিন কাটে অস্থায়ী সব কাজ করে। কখনো ইটের ভাটায় মাস ছয়েকের জন্য। আবার কখনো ছোটখাটো ব্যবসা।
সৎমা থাকে বাবার ভিটায় তাই আতিউরের বেড়ে ওঠা নানীর কাছে। আতিউরের ইদের দিন একটু ভালো খাবার খাওয়ার মধ্যেই নিহিত ওর ইদ আনন্দ। শেষ কবে আতিউর ইদের দিনের জন্য পোষাক কিনেছে তাই মনে করতে পারে না।