শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাটকীয় জয় পেয়েছেন বামপন্থি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শেষে দেশটির নির্বাচন কমিশন রোববার তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এবারও শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন। খবর আলজাজিরা ও এএফপির।
প্রথম দফার ভোট গণনায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শুরু করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। শ্রীলঙ্কার বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। কোনো প্রার্থী অর্ধেকের বেশি ভোট না পেলে ভোটারদের পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা করতে হয়।
শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার প্রয়োজন পড়েনি। তবে এবারের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আগেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল, ফলাফল দ্বিতীয় ধাপের গণনার দিকে গড়াতে পারে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, প্রথম দফার ভোট গণনা শেষে বামপন্থি প্রার্থী কুমারা দিশানায়েকে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসা। এখন ভোটারদের দেওয়া অগ্রাধিকার ভোট গণনা করে দেখা হয়, সেখান থেকে এই দু’জন প্রার্থী কে কতটি ভোট পেয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়াও পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে হয়। এখন সেই তালিকা দেখেই কুমারা দিশানায়েকে ও সাজিদ প্রেমাদাসা কে কত ভোট পেয়েছেন, তা গণনা করে দেখা হয়। অগ্রাধিকার ভোট হিসাব করার পর এই দুই প্রার্থীর মধ্যে যিনি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন, তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার চূড়ান্ত ফলাফলে ৫৫ বছর বয়সী কুমারা দিশানায়েকেকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁর এ জয়কে অভূতপূর্ব বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল তিনটি আসন পেয়েছিল।
শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। রোববার সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশটির ১ কোটি ৭১ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৭০ শতাংশ ভোটার।
শ্রীলঙ্কার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হন ৩৮ জন। এর মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। তিনি ছয়বার দেশটির প্রধানমন্ত্রীর হাল ধরলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একবারও জিততে পারেননি। রাষ্ট্রপ্রধানের পদে এ নিয়ে তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ২০২২ সালে দেশটিতে গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসে ক্ষমতাচ্যুত হলে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান বিক্রমাসিংহে। এর পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো দেশটিতে।