পুরো মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। কোনো কোনো পুরুষ দর্শক এসেছেন লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে। নারীদের কেউ কেউ মেক্সি পরেও নাটক দেখতে এসেছেন। পুরান ঢাকার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের চিত্র ছিল এমনই।
গত শুক্রবার এটি দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর নাটক দেখতে পেরে সবার মাঝে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। প্রায় ছয় মাস পরে এ কেন্দ্র খুলেছে। চলতি বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে কেন্দ্রটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।ওইদিন ‘শাস্তি’ নাটকটি মঞ্চায়ন করেছে স্বরবীথি থিয়েটার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শওকত হাসান। এতে অভিনয় করেছেন মিজান, পূর্ণিমা, শওকত হাসান, হাবিবুল্লাহ রিপন, স্বপন, বাদশাহ ইলিয়াস প্রমুখ। নাটক দেখতে এসেছিলেন আবু সাঈদ তুলু। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নাটকের জন্য শিল্পকলা ছাড়া ভালো মঞ্চ নেই। শিল্পকলায় অনেক দিন ধরে নাট্য প্রদর্শন বন্ধ। সম্প্রতি নানাভাবে তা খোলার আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখনও খোলা হচ্ছে না। জহির রায়হান কেন্দ্রটি অবশেষে খুলেছে। বেশ ভালো লাগছে। মানুষ ভালো-মন্দ আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ না করে থাকতে পারে না।
বোধ-বুদ্ধি-প্রকাশধর্মী জীবনাচারই সংস্কৃতি। আর মানব-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার পরিবেশনা বা নাটক। অতএব মানুষ প্রজাতি যে ধর্মবিশ্বাসীই হোক না কেন অবচেতনভাবেই সে প্রকাশধর্মী। তাই ধর্মের দোহাইয়ে সংস্কৃতিচর্চার বাধা মানেই মানবাত্মার আনন্দকে অস্বীকার করা। অতএব উচিত সংস্কৃতিচর্চার অবাধ পথকে প্রশস্ত করা।’রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের লোহারপুল এলাকায় গেলেই দৃষ্টি পড়তে বাধ্য জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দিকে। ২০০৮ সালের ২২ মার্চ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে যাত্রা শুরু হয় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের। তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। জাঁকজমকভাবে যাত্রা শুরু করা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা বিবর্ণ হয় কেন্দ্রটি।
জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক অমরেশ মণ্ডল রতন বলেন, ‘অনেক দিন সংস্কার হচ্ছিল না কেন্দ্রটির। এসি, লিফট নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া কারিগরি কিছু ত্রুটি ছিল। এ কারণে কেন্দ্রটি রোজার শুরু থেকেই বন্ধ রেখেছি। সবকিছু এখন ঠিক হয়েছে। দর্শকরা এখন বেশ আরামেই এখানে নাটক দেখতে পারবেন বলে আশা করছি।’