ত্বকের সেবা করা মানে শুধু পরিষ্কার করা নয় পাশাপাশি আর্দ্র রাখাও জরুরি পাশাপাশি ত্বকের যে কোনো সমস্যা সারানো আর সুরক্ষারও ব্যবস্থা নিতে হয়।
আর ত্বক পরিচর্যার প্রাথমিক ধাপে সবসময় ব্যবহার করতে হয় ক্লেঞ্জার, ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন।
এই বিষয়ে হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ম্যাসাচুসেটস নিবাসী ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. উইলিয়াম ট্রাসওয়েল বলেন, “ত্বকের ধরন আর অন্যান্য লক্ষ্য পূরণ করার জন্য অন্যান্য উপাদানও যোগ করা যায়। আর শুষ্ক, তৈলাক্ত, বয়সের ছাপ বা ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।”
তাই সকাল ও সন্ধ্যার ত্বকের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি হয় আলাদা।
সকালে ত্বকের যত্ন
ঘুমের সময় জমে থাকা ময়লা ও তেল দূর করে সারাদিনের জন্য প্রস্তুত করতে ত্বক পরিচর্যার সঠিক পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। যাতে সারাদিন ত্বক থাকে আর্দ্র আর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যায়।
ধাপ-১: ক্লেঞ্জার
সকালে মুখ পরিষ্কারে প্রধান কারণ হল ঘুমের মধ্যে জমে থাকা মুখের তেল ও ময়লা দূর করা। যাতে লোমকূপ আটকে না যায়।
স্বল্প মাত্রার, অ্যালকোহল মুক্ত ক্লেঞ্জার ব্যবহার করা উপকারী। যাতে ত্বক থেকে বেশি তেল সরে না যায়। আর যাতে ত্বকের সুরক্ষক অটুট থাকে।
ত্বক শুষ্ক হলে তেলধর্মী ক্লেঞ্জার ব্যবহার করা উপকারী।
কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে হালকাভাবে ফেইস ওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে।
সেরামাইডস, গ্লিসারিন বা হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্লেঞ্জার বা ফেইস ওয়াশ শুষ্ক ত্বক আর্দ্র করতে সহায়তা করে। বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, স্যালিস্যাইলিক অ্যাসিড বা টি ট্রি ওয়েল যুক্ত ক্লেঞ্জার ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ধাপ-২: টোনার
উপাদানের ওপর ভিত্তি করে টোনার ত্বক আর্দ্র রাখতে পারে। আর ধোয়ার পরও তেলেভাব ও ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। সকালের রূপচর্চায় ‘টোনার’ ব্যবহার ঐচ্ছিক বিষয়। তবে শুষ্ক ও ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য উপকারী।
তুলাতে টোনার ভিজিয়ে নিয়ে হালকা চাপে মুখে লাগাতে হবে। নজর দিতে হবে ‘টি জোন’, কপাল, নাক এবং চিবুকে।
তৈলাক্ত বা ব্রণ প্রবণ ত্বক হলে টোনার মুখে সরাসরি ছিটানো যায়।
শুষ্ক ত্বকের জন্য আর্দ্রতা রক্ষাকারী হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ টোনার বা গোলাপ পানি ব্যবহার উপকারী।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা উইচ হ্যাজেল উপাদান সমৃদ্ধ টোনার অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে পারে, যা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো ফল দেয়।
ধাপ-৩: দাগ বা ব্রণের পরিচর্যা
ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা যায় ‘স্পট’ বা ‘অল ওভার একনি ট্রিটমেন্ট’ প্রসাধনী। বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইড এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদধ প্রসাধনী ব্রণ কমাতে কার্যকর।
দাগ কমাতে ব্যবহার করা যায় হইড্রোকুইনিন সমৃদ্ধ সেরাম।
ধাপ-৪: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেরাম
সকালের সেরাম ত্বক উজ্জ্বল, আর্দ্র ও রক্ষা করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি, ই বা নিয়াসিনামাইডস সমৃদ্ধ সেরাম ব্যবহার উপকারী।
ঘষে নয়, হালকা ভাবে চেপে গলায় ও মুখে সেরাম মাখতে হয়।
ধাপ-৫: আই ক্রিম
ঐচ্ছিক হলেও চোখের নিচে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে ‘আই ক্রিম’।
ক্রিম চোখের নিচে লাগিয়ে আঙ্গুলের আগা দিয়ে হালকাভাবে লাগাতে হবে।
দিনের আই ক্রিমের জন্য বেছে নিতে হবে- হাইড্রেটিং পেপটাইডস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ভিটামিন সি এবং এসপিএফ যুক্ত- যা চোখের নিচের ত্বক সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।
ধাপ-৬: ময়েশ্চারাইজার
মুখে ও গলায় মায়েশ্চারাইজার মাখলে সারাদিন ত্বক আর্দ্র থাকে। এটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ত্বকের ক্ষতি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষার স্তর তৈরি করতে সাহায্য করে।
মায়েশ্চারাইজারে থাকা জলীয় উপাদান ত্বকের আর্দ্রতা আটকে রাখতে পারে। এমনকি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদেরও এই প্রসাধনী ব্যবহার উপকারী।
ধাপ-৭: সানস্ক্রিন
সকালে রূপচর্চার শেষ ধাপ হল সানস্ক্রিন প্রয়োগ। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করতে ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ) ৩০ বা বেশি মাত্রার সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
মুখে, গলায়, বুকে, কানে- অর্থাৎ ত্বক যেখানেই উন্মুক্ত থাকবে সেখানেই মাখতে হবে। আর প্রতি দু ঘণ্টা পর পর পুনারায় ব্যবহার করতে হয়।
রাতের ত্বক পরিচর্যা
সারাদিনের ময়লা পরিষ্কার করতে আর ত্বকের আর্দ্রতা ফেরাতে রাত বা সন্ধ্যার ত্বক পরিচর্যা জরুরি।
ধাপ-১: ক্লেঞ্জার
ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে কোনো স্বল্প মাত্রার ক্লেঞ্জার ব্যবহার করে মুখের ময়লা দূর করতে হবে। আর সকালের থেকে রাতের মুখ পরিষ্কারের প্রধান পার্থক্য হতে পারে, মেইকআপ থাকলে সেটা দূর করা।
মেইকআপ দূর করতে তেল হীন ‘মেইকআপ রিমুভার’ বা ‘মাইসেলার ওয়াটার’ ব্যবহার করা যায়। এতে লোমকূপ আটকে যাওয়া থেকেও রক্ষা পাবে।
ধাপ-২: টোনার
যদিও গুরুত্বপূর্ণ না, তবে রাতে টোনার ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র থাকে। আর যে কোনো অতিরিক্ত ময়লা বা তেল দূর হয়। সকালের যে টোনার ব্যবহার করা হবে সেটা রাতের ত্বক পরিচর্যাতেও ব্যবহার করা যাবে।
ধাপ-৩ দাগ দূর
বেঞ্জাঅয়েল পারোঅক্সাইড বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড নির্ভর দাগ দূর করার প্রসাধানী ব্যবহার করা উপকারী। তবে রাতে ত্বকে অস্বস্তি হতে পারে সেজন্য রেটিনল ভিত্তিক ‘স্পট ট্রিটমেন্ট’ প্রসাধনী ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
ধাপ-৪: সেরাম ও ব্রণ নিরাময়
রাতের রূপচর্চায় সেরাম ও ‘একনি ট্রিটমেন্ট’ করা জরুরি না হলেও, এই ধাপ অনুসরণ করলে ত্বকের সুক্ষ্ম রেখা ও ব্রণের দাগ দূর হয়।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই, পেপটাইডস বা সেরামাইডস সমৃদ্ধ আর্দ্রতা রক্ষার সেরাম শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী।
শুষ্ক ও তৈলাক্ত দুই ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যায় ‘এএইচএ’ যেমন- গ্লাইকোলিক এবং ল্যাক্টিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সেরাম। এই ধরনের সেরাম ‘ব্ল্যাকহেডস’ ও ফুসকুড়ি বা ত্বকের দানা দূর করতেও সাহায্য করে।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সেরাম লোমকূপ উন্মুক্ত করে আর প্রদাহ কমায়।
ধাপ-৫: রেটিনল
এই ভিটামিন এ ব্রণ এবং ত্বকের সুক্ষ্ম বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়।
তবে সংবেদনশীল ত্বক হলে রেটিনল এবং রেটিনয়েড সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহারে সাবধান হতে হবে। কারণ প্রদাহ তৈরি করতে পারে।
ধাপ-৬: আই ক্রিম
রাতে আই ক্রিম ব্যবহার করা এড়ানো যাবে না। এটা চোখের আশপাশের বলিরেখা পড়ার সম্ভাবনা কমায় ও ত্বক আর্দ্র রাখে।
রেটিনল, নিয়াসিনামাইডস বা হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ আই ক্রিম বেছে নিতে হভে।
ধাপ-৭: ময়েশ্চারাইজার বা নাইট ক্রিম
সাধারণ ময়েশ্চারাইজার দিয়েই রাতে পুরো ত্বকে মাখা যায়। আর ‘নাইট ক্রিম’ আলাদাভাবে মাখলে রাতে ত্বকের উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ধাপ-৮: ফেইস অয়েল
এটা ব্যবহার করাটা্ ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তবে এই ধাপ অনুসরণ করলে ত্বকে মিলবে আরও আর্দ্রতা। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর কয়েক ফোঁটা ‘ফেইস ওয়েল’ মুখে ও গলায় মেখে নিতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য আর্গন বা নারিকেল তেল ব্যবহার করা ভালো। তৈলাক্ত ত্বকে হালকা তেল ব্যবহার করতে হবে, এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যেতে পারে জোজাবা বা ‘গ্রেপসিড অয়েল’।
এই তেলগুলো ত্বকের অতিরিক্ত তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। আর লোমকূপ আটকে যাওয়া রোধ করতে পারে।