ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন-পূর্ব সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের মত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে রিটার্নিং অফিসার, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

বৃহস্পতিবার ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পর্যালোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

ইউপি ভোট নিয়ে বৃহস্পতিবারও নরসিংদীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ভোটকেন্দ্রীক সহিংসতা বাড়ায় উদ্বেগ জানিয়ে আগের দিনও সিইসি বলেছিলেন, সংঘাত এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকর উদ্যোগ না দেখে তিনি ‘বিব্রত’।

প্রথম ধাপে দেশের ৩৬৪ ইউপির ভোট হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬ ইউপির ভোট রয়েছে ১১ নভেম্বর, তৃতীয় ধাপে ১০০৩ ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি নির্বাচন উপযোগী ইউপির ভোট করার কথা রয়েছে।

নির্বাচনের আগে গোলযোগ ও সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “আটটি বিভাগের মধ্যে ঢাকা ও খুলনা বিভাগে উত্তেজনা, সহিংস ঘটনা রয়েছে। সময়োপযোগী কর্মতৎপরতায় খুলনায় তা অনেকখানি কমেছে। স্থানীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা হয়।”

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ঢাকার ব্যাপারে সচেতন থাকব। কোন কোন পকেটে এই সমস্যা আছে, এখন থেকে যেন সেগুলো চিহ্নিত করতে পারি, সে ব্যাপারে তৎপর হতে হবে।”

ইসির যে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এবং ভোট বন্ধের এখতিয়ার আছে, সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিইসি হুদা বলেন, “আচরণবিধি লঙ্ঘন করার কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। সমস্যাগুলো আমাদের কাছে আসতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ওই এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ ভালো না, সেখানকার নির্বাচন বন্ধ করে দেব। আচরণবিধি ভঙ্গ হলে তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা আমাদের আছে।”

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ‘সাহসী ভূমিকা রাখার’ নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রায় সকল দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অর্পিত থাকে। নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রায় কিছুই থাকে না। তারা দায়িত্ব পালনের জন্য যে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা চাইলে দেওয়া হবে।  তবে সব থেকে বেশি সহযোগিতা নিতে হবে মাঠপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

“জেলা প্রশাসক যারা আছেন, তারা পাশে থেকে সাহস যোগাবেন। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে কেউ যাতে পার পেয়ে যেতে না পারে, সেই জন্য ব্যবস্থা নিতে উৎসাহ দিতে হবে। কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে তারা আইনের আওতায় আসবে।”

মাঠ কর্মকর্তাদের নিরপক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলেন সিইসি।

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “সহিংসতা চলছে, বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এর শিকার। স্থানীয়ভাবে তারা প্রতিকার পাচ্ছে না বলে মনে হয়। আপনারা যেন নজর দেন, তারা যেন সমান সুযোগ পান। তাতে এ বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে আসবে, সহিংসতা কমবে।”

রিটার্নিং অফিসারদের  উদ্দেশে তিনি বলেন, “কোনো প্রার্থীর  কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে না পারলে প্রার্থিতা বাতিলে পিছ পা হবেন না। দৃষ্টান্ত নেন, আর কেউ করবে না। রিটার্নিং অফিসারদের উপরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- এক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য নয়। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ইউপির নির্বাচন বন্ধ করে দেবেন।”

সুষ্ঠু নির্বাচনে সবার সহযোগিতা চেয়ে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী  বলেন, “আমরা চাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। দলগুলোর প্রতি অনুরোধ থাকবে, যেন স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যেন ব্যবস্থা নেয়।”

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা অংশ নেন।