বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নতুন সৈনিকদের সীমান্তবর্তী প্রতিপক্ষকে কোনো অবস্থাতেই পিঠ না দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি)’- এর ‘বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে’ বিজিবির ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান শেষে মিয়ানমার ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বর্ডার আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মি আমাদের বিপরীতে যে জায়গাগুলো তা দখল করে নিয়েছে। এখন আমাদের আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে নাফ নদী ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু বিজিবি-কোস্টগার্ড যেতে বাধা দেয় না। কিন্তু আমাদের যে বড় জাহাজগুলো আসে সেগুলোকে বাধা দেয়। সমাধানের চেষ্টা চলছে।
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আসছে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শুধু বিএসএফ নয়, সীমান্ত এলাকায় শত্রুতার জেরে দুই গ্রুপের অন্তকোন্দলেও হত্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরপর যে দুটি সীমান্ত হত্যা হয়েছে সেটি বিএসএফ নয়, খাসিয়াদের শত্রুতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এপারেও খাসিয়া, ওপারেও খাসিয়া আছে। এপার-ওপার আসা যাওয়া-আসা নিয়েও তাদের দ্বন্দ্ব হয়। সীমান্তে প্রতিপক্ষের কাছে কোনো অবস্থাতেই পিঠ প্রদর্শন করবে না বিজিবি, বুকটাই যেন দেখায়। যারা হুঙ্কার দিচ্ছে আমরাও বেশি করে প্রতিউত্তর দিচ্ছি।
সোমবার টেকনাফ উপজেলা হ্নীলার ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড় এলাকা থেকে ১৯ জন শ্রমিককে অপহরণ করা হয়। তাদের উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের শপথগ্রহণ, প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪,৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, মাতৃভূমির অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সকলের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি- ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত থাকতে আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম হওয়া (বক্ষ নম্বর-১৯৩ রিক্রুট জিডি) মো. নাঈম মণ্ডল এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে তাদের সফলতার জন্য ক্রেস্ট তুলে দেন।
উল্লেখ্য, ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি)-এ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন।
৬৯৫ জন নতুন সৈনিকের মধ্যে প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন টাঙ্গাইলের নাঈম মণ্ডল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডিফেন্সে চাকরি করব। সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। মাতৃভূমি রক্ষায় কাজ করবেন তিনি।
৪৬ জন নারী সৈনিকের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নুখিংসায় মারমা। বান্দরবানের এই বাসিন্দা বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড রক্ষার্থে পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।