সুন্দরবনের মধু বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের মৌচাষি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আনন্দে উচ্ছ্বসিত।
বুধবার এই স্বীকৃতির সনদপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
খুলনার গল্লামারি বাজারের খুচরা মধু ব্যবসায়ী জয়নুল আলম বলেন, “স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে মধুর চাহিদা বেড়েছে। আমরা খুবই খুশি।” তিনি জানান, বর্তমানে গরান ফুলের মধু কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং বিভিন্ন খালিশা ফুলের মধু ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডালমিল মোড় এলাকার পাইকারি মধু ব্যবসায়ী কাজী ইসরাফিল বলেন, “জিআই স্বীকৃতির খবর শুনে খুব ভালো লাগছে। আমরা বহুদিন ধরে এই স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
এদিকে সাধারণ মৌচাষি ও মধুপ্রেমীরাও জানিয়েছেন, ভারত ইতোমধ্যে সুন্দরবনের মধুর জন্য জিআই ট্যাগ পেয়েছে। তখন থেকেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অবহেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। অবশেষে সেই দাবি বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
চট্টগ্রামের আলওয়ান হানি মিউজিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার বলেন, “সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মধুর প্রধান উৎস। এর ঘ্রাণ ও স্বাদ অনন্য, যার বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে। জিআই স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এই মধুর ব্র্যান্ডিং আরও শক্তিশালী হবে।”
বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমানের হাতে এই সনদ তুলে দেওয়া হয়।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোমিনুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালের ৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকের পক্ষে জিআই স্বীকৃতির আবেদন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের জুনে অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর এবার আমরা সুখবর পেলাম। এটি জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল।”
বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের মৌচাষি শারফুজ্জামান বলেন, “আমরা প্রায় ৬ হাজার মৌচাষি বাঘ, সাপ ও কুমিরের ভয় উপেক্ষা করে সুন্দরবনে ঢুকে মধু সংগ্রহ করি। ২৪ বছর ধরে এই পেশায় আছি। এ স্বীকৃতি আমাদের গর্বের।”
একই এলাকার আরেক মধু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, “বলেশ্বর নদ পার হলেই সুন্দরবন। আমি ১০ বছর ধরে মধুর ব্যবসা করছি। কখনো কেউ এই মধুর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এখন জিআই স্বীকৃতি পেয়ে সবাই খুব খুশি।”
খুলনার দাকোপ উপজেলার বাসিন্দা মফিজুর রহমান বলেন, “সুন্দরবনের মধু আমাদের অঞ্চলিক পরিচয়ের অংশ। সরকারকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, “সুন্দরবনের অধিকাংশ মধুই বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। জিআই স্বীকৃতির ফলে রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়বে এবং উপকূলীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও দামও বাড়বে।”