স্পেনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১১ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চল ভ্যালেন্সিয়া প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার চারদিন পরও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ শনিবার জানিয়েছেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে সানচেজ জানান, ওই অঞ্চলে তল্লাশি ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সাহায্য করার জন্য ইতোমধ্যে ২৫০০ সেনা মোতায়েনের পর সরকার অতিরিক্ত আরও ৫০০০ সেনা পাঠাচ্ছে।তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ সময়ে স্পেনে সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে বড় অভিযান এটি। তাদের যতদিন দরকার হবে ততদিন সব ধরনের প্রয়োজনীয় সম্পদ কাজে লাগাতে যাচ্ছে সরকার।”
এই শোচনীয় ঘটনা ইতোমধ্যেই ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় বন্যাজনিত দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই বছর পর্তুগালে এ ধরনের আরেক দুর্যোগে অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।এদিকে ভ্যালেন্সিয়ার আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান করার পর তাতে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ভ্যালেন্সিয়া নগরীর আর্টস এন্ড সায়েন্সে সেন্টারে গিয়ে জড়ো হয়েছেন। এই ভেন্যুটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রথম সমন্বিত পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ত আগমণে কিছু এলাকায় পেশাদার জরুরি কর্মীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করেছিল। এতে কর্তৃপক্ষ তাদের কোথায় ও কীভাবে মোতায়েন করা হবে তার একটি পরিকল্পনা উদ্ভাবন করতে বাধ্য হন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।ভ্যালেন্সিয়ার শহরতলী আলফাফারে ১৯ বছর বয়সী তরুণ রাফায়েল আরমেরো রয়টার্সকে বলেন, “আমি তিন দিন ধরে শহরের ঘুরে ঘুরে যার যখন প্রয়োজন সাহায্য করছি। যার প্রয়োজন তাকেই দেওয়ার জন্য আমাদের ব্যাকপ্যাক খাবার ও পানি দিয়ে ভরে রেখেছি।”
বিদ্যুৎ সঞ্চলন কোম্পানি ইবেরদ্রোলা জানিয়েছে, ভ্যালেন্সিয়ার ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবার শুক্রবার বিদ্যুৎ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা এলাকাগুলোর হাজার হাজার গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। এই এলাকাগুলোতে পৌঁছতে উদ্ধারকারীরাই হিমশিম খাচ্ছে।এদিকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় মানুষ খাবার এবং পানির অভাবে নিরূপায় হয়ে লুটপাট করেছে। শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছে, ভ্যালেন্সিয়া এলাকায় দোকান ও বিভিন্ন দপ্তরে ডাকাতির অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বালেয়ারিক দ্বীপপুঞ্জ, কাতালোনিয়া এবং ভ্যালেন্সিয়ায় নতুন করে আবহাওয়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনি ও রোববারও এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।স্পেনের পূর্বাঞ্চলের বিধ্বংসী এই বন্যার জন্য আবহাওয়াবিদরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন। তবে স্পেনের বিরোধী রাজনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করছেন। সরকার সঠিক সময়ে সতর্কবার্তা দেয়নি এবং উদ্ধার তৎপরতায়ও দেরি করেছে বলে অভিযোগ তাদের।