প্রতিদিন যাদের সাথে গল্প করেন, আড্ডা দেন কিংবা কাজের প্রয়োজনে একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান তারা মানুষ হিসেবে কেমন— ভেবেছেন কি? তারা কি কেবল আপনাকে ব্যবহারই করেন, নাকি আপনার প্রয়োজনেও পাশে দাঁড়ান? আসলে আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু সবাই খুব কাছের হয় না। সবার ওপর ভরসা করা যায় না। অনেক সময় খুব কাছের মানুষ সেজে অনেকে প্রতারণা করে। নিজের সুবিধা ও লাভের বিষয়গুলো ষোলোয়ানা বোঝে। মানুষের চেহারায় তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লেখা থাকে না। মানুষকে চিনতে হয় তাঁর আচরণ দিয়ে। তাদের কিছু আচরণই বলে দেবে তারা স্বার্থপর কিনা।
স্বার্থপর বন্ধু ও সহকর্মী কীভাবে চিনবেন?
স্বার্থপর ব্যক্তিরা সবসময় নিজেকে বেশি প্রাধান্য দেন। তিনি যে কেবল নিজের যত্ন নিতে ব্যস্ত থাকেন, তা নয়। এ ধরনের ব্যক্তি সব অবস্থায় নিজের ইচ্ছা, চাহিদা, প্রয়োজনকে আগে প্রাধান্য দেন। নিজের ইচ্ছার বাইরে কোনোকিছু করতে চান না। এমনকি অন্যকে দিয়ে নিজের প্রয়োজনগুলো পূরণ করতেও তারা সিদ্ধহস্ত থাকেন।
স্বার্থপর মানুষ অন্যের অনুভূতিগুলো বিবেচনা করেন না। কারও অসুবিধা, দুঃখ-কষ্ট, পারিবারিক সমস্যা দেখার সময় যেন তাদের হাতে নেই। তারা মানুষকে ভেতর থেকে ভালোবাসেন না। কেবল সামনাসামনি ভালোবাসার অভিনয় করেন। কর্মক্ষেত্রে এমন স্বার্থপর সহকর্মী প্রায়ই দেখা যায়। তারা অন্য একজন সহকর্মীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা বিবেচনা করেন না। উল্টো কাজের গতি কমে গেলে বদনাম করে বেড়ান।
জীবনে চলার পথের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়। মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিয়ে পথ চলতে হয়। স্বার্থপর ব্যক্তিরা ছাড় দিতে চান না। তারা ছাড় দেওয়াকে হেরে যাওয়া মনে করেন। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মেরুদণ্ড হলো ছাড় দেওয়া।
স্বার্থপর ব্যক্তিরা নিজের কোনো কিছু অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চান না। খাবার, পোশাক কিংবা অন্য কোনো সামগ্রী শেয়ার করেন না। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলেন, শেয়ার করা খুব ভালো অভ্যাস। এতে সামাজিক সম্পর্ক ও দায়িত্ববোধ বাড়ে। এ ধরনের ব্যক্তিরা নিজেদের দুঃখ, অপারগতা অন্যের কাছে প্রকাশ করতেও ভয় পান। তাদের মাথায় হারজিতের অসংখ্য প্রশ্ন খেলা করে। তারা কেবল জিততে চান।
আপনার আশপাশে তাকালে এমন কিছু লোক নিশ্চয় পাবেন, যারা সবসময় নিজেকে প্রতারিত ও বঞ্চিত ভাবেন। জীবনে যা কিছু হয়, সবকিছু তারা অধিকাংশ সময় মানতে পারেন না। দায়িত্ব এড়াতে এবং অন্যের কাঁধে দোষ চাপাতে তারা ব্যস্ত থাকেন।
যে কোনো সম্পর্কে আবেগীয় সীমানা থাকা দরকার। কী করা যাবে, কতটুকু করা যাবে তার মাত্রা থাকা উচিত। আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর মানুষ সেসব মাত্রা ছাড়িয়ে যান। স্পেস ও স্বাধীনতা দিতে চান না। নিজস্ব ভাবনার বাইরেও ভাবতে পারেন না।
স্বার্থপর মানুষ নিজেকে নিয়ে এতটা ব্যস্ত থাকেন, অন্যকে তিনি মূল্যায়ন করতে চান না। অন্যের সফলতা, অর্জনকে একবাক্যে ছোট করে দেন। সফল ব্যক্তিকে হেয় করতে দ্বিধা করেন না। তারা সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান।