নেটের একপাশে বিকিনি পরা ইতালিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীরা; আরেক পাশে হিজাব, ফুলহাতা শার্ট ও লেগিংস পরা দোয়া এলঘোবাশি। বিচ ভলিবলের এক কোর্টে এমন ভিন্ন দৃশ্য দেখে দর্শকদের চোখ ছানাবড়া। ম্যাচ শেষে অনেকের টিপ্পনী, আবার খোঁচাও। তবু হাসিমুখে নিজ দেশের পতাকা হাতে মাথা উঁচু করেই ল্যাপ অব অনার দিয়ে যান এলঘোবাশি। যদিও আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেননি। মঙ্গলবার প্রিলিমিনারি পেজে ইতালির দুই প্রতিযোগী ম্যানেগাটি ও গোটার্ডির সঙ্গে ২-০ ব্যবধানে হেরে যান।
তৃতীয় ম্যাচে বৃহস্পতিবার এলঘোবাশি ও তাঁর স্বদেশি সতীর্থ আব্দেলহাদি নামবেন স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে। তার আগেই নিজের হিজাব নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন এই মিসরীয় কন্যা। তাঁর কথায় মনে হবে হিজাব কেবল পরার জন্যই তিনি পরেন না। এটা তাঁর শক্তি, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
সে জন্য মুসলিম হিসেবে, মুসলিম দেশের প্রতিনিধিত্ব করতেও তাঁর একটুও যেন আপত্তি নেই, ‘ম্যাচের পর আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যাই মানুষের নানা প্রশ্ন শুনে। তাদের অনেকে বলেন, এটা তো এমন প্রতিযোগিতায় পরা যায় না। বিকিনি কেন পরে না সে। দেখুন, আমি মুসলিম হিসেবে বিকিনি পরে খেলতে পারি না। আমার কাছে ধারণাটা এমন, আপনি মুসলিম হলেও বিচ ভলিবল খেলতেই পারেন। শুধু ভলিবলই নয়, সব খেলাতেই অংশ নিতে পারেন। আমি সব মুসলিম মেয়েদের বলব, আপনারা যদি খেলতে চান, খেলুন। সেটা হিজাব পরে হোক কিংবা হিজাব ছাড়া। তা ছাড়া আমি হিজাব পরে খেলতে ভালোবাসি, বিকিনি নয়। এটা আমার জন্য স্বাধীন থাকা উচিত। আমি যে পোশাকে স্বস্তি পাব, সেটাই পরব। তবে এটা সবার জন্য নয়।’
এলঘোবাশির এমন স্পষ্ট কথার জন্য অনেকেই তাঁর গলায় প্রশংসার মালা পরাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যারি গারকা তো বলেই দিয়েছেন, এলঘোবাশি অন্যদের জন্য রোল মডেল। তাঁকে চাইলে অন্যরাও অনুসরণ করতে পারে।
যদিও এবারের অলিম্পিকের আয়োজক ফ্রান্স তাদের কোনো অ্যাথলেটকে হিজাব পরা অবস্থায় দেখতে চায় না বলে বিবৃতি দেয়। শুধু বিবৃতিই নয়, তারা হিজাবকে নিষিদ্ধ করে। সেখানে মিসরের এই বিচ ভলিবল খেলোয়াড় হিজাব পরে দর্শকদের নানা কথা হজম করেই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। শুধু নিজ দেশ মিসর নয়, পুরো আফ্রিকার মুসলিম মেয়েদের জন্য তিনি এখন রোল মডেল, ‘বিচ ভলিবলের প্রতি আমার ভালোলাগাটা পুরোনো। আমি ইনডোরের চেয়ে আউটডোরেই খেলতে বেশি পছন্দ করি। কোর্টে ভিন্ন একটা অনুভূতি সব সময়ই কাজ করে। এই প্রতিযোগিতা ঘিরে আমার দারুণ কিছু স্মৃতি রয়েছে। আরও একবার অলিম্পিকে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।’
এর আগে ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিলেন এলঘোবাশি। সেবারও হিজাব পরে কোর্টে নেমে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। যদিও মুসলিম নারী খেলোয়াড়দের হিজাব পরার ঘটনা এখন প্রায় শোনা যাচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক আসরে প্রথম হিজাবি নারী আমিরাতের স্কেটার জাহারা লারি। যাঁকে নিয়েও কম আলোচনা হয়নি।