শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভারতের সামাজিক মাধ্যমে বহু ভুয়া পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার শুরু হয়েছে।
বিবিসির তথ্য যাচাই বিভাগ বিবিসি ভেরিফাই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের অনেকগুলো যাচাই করে দেখেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি অনেক হামলার গুজবও ছড়ানো হয়েছে। তবে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে তা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নাকি সরকার ঘনিষ্ঠদের ওপর ক্ষোভের অংশ হিসেবে হয়েছে, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে ‘ব্যাপক অত্যাচার’ হচ্ছে বলে যেসব ভুয়া পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশির ভাগই ভারতীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে বলে ফ্যাক্ট-চেকাররা নিশ্চিত করেছেন। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকেও এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে।
তারা বলছেন, নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে কিছু আক্রমণ হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালানো হয়েছে। তবে তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, মুসলমানদের বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে, জ্বালানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘর, সম্পত্তি। ধর্মীয় পরিচয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গৌণ ছিল, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্যই তারা আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের যেসব স্থানীয় নেতাকর্মী পালিয়ে ভারতে গেছেন অথবা যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িতেই হামলা হয়েছে।
তবে ভারত থেকে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টিকে রাজনৈতিক না রেখে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক ফ্যাক্ট-চেকার। বিবিসির তথ্য যাচাইয়ের বিভাগ ‘বিবিসি ভেরিফাই’-ও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
হিন্দু মন্দিরে আক্রমণ হয়েছে বলে যে ধরনের পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল, তার কয়েকটি চোখে পড়েছিল চট্টগ্রামের এক বিক্ষোভকারী মইনুলের। ‘বিবিসি ভেরিফাই’ যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তিনি সে সময়ে চট্টগ্রাম লাগোয়া ‘শ্রী শ্রী সীতা কালীমাতা মন্দির’ পাহারা দিচ্ছিলেন। মইনুল বলছিলেন, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব তো আমাদের। আমরা সব সরকারি স্থাপনা, মন্দির, গির্জা সব কিছুই রক্ষা করব।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে চারদিকে যখন একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছিল, সেই সময়ে ভারতের অতি-দক্ষিণপন্থি ‘ইনফ্লুয়েন্সর’রা সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার করতে থাকেন, যাতে মনে হয় যে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার হচ্ছে। এ ছাড়া এ রকম গুজবও ছড়ানো হয় যে ছাত্র-বিক্ষোভকারীরা ‘ইসলামী কট্টরপন্থি’। যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রেন্ডিং পোস্টগুলো করা হয়েছিল, তার প্রায় সবই ভারতে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকাররাও গত কয়েক দিনের সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণ করে অনেকটা একই রকম তথ্য পেয়েছেন যে, মূলত ভারতের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকেই হিন্দুদের ওপরে আক্রমণের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এক হিন্দু ব্যক্তি সাঁতার কেটে পালাচ্ছেন বলে যে ভিডিও ছড়িয়েছে, তিনি আসলে মুসলমান।