নির্ধারিত সময়ের পরও দুদফা বাড়ানো হয় চলতি বছরের হজের ভিসা আবেদনের সময়। কিন্তু শেষ দিন শনিবার (১১ মে) ভিসা আবেদন হয়নি ১৮ হাজার হাজীর। সৌদি সরকার যদি ভিসা আবেদনের সময় না বাড়ায় তবে তাদের চলতি বছর হজে যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়বে। তবে ভিসা আবেদনের সময় তৃতীয় দফা বাড়ানোর জন্য সৌদি সরকারকে চিঠি দিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। ফের সময় বাড়ছে এমনটা আশ্বস্ত করেছেন ধর্ম সচিব।
শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ধর্ম সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাজীদের ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। যাদের ভিসা আবেদন হয়নি তাদের ব্যাপারে সুখবর আসবে।
তিনি বলেন, আমরা সৌদি সরকারের ওমরাহ ও হজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করি ভিসা আবেদনের সময় বাড়বে।
তিনি আরও জানান, ভারত ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ ভিসার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। আশা করি সৌদি সরকার এসব বিষয় বিবেচনা নিয়ে সময় বাড়াবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সরকার ও বেসরকারি ব্যবস্থায় হজে যেতে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ২১৮ জন। এরসঙ্গে হজ গাইড ও মোয়াল্লেম মিলে এ সংখ্যা ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, শনিবার রাত নয়টা পর্যন্ত মোট ভিসা পেয়েছে ৬৭ হাজারের কিছু বেশি। সে হিসেবে এখনও ভিসা পায়নি ১৮ হাজার ২৩৭ জন। আজ রাত ১২ টায় ভিসা আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে ভিসা কার্যক্রম শেষ করতে না পারলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে বলে আগেই জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। যদিও ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় নিজেই জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্ম সচিব বলেন, বেশিরভাগ হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে যায়। এজেন্সিগুলো বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা সৌদিতে বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তা মন্ত্রণালয়ের ওপর এসে বর্তায়।
গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) থেকে চলতি বছরের পবিত্র হজের ফ্লাইট শুরু হয়েছে। শেষ ফ্লাইট যাবে আগামী ১০ জুন। অথচ এখনও ভিসা পাননি ১৮ হাজারের বেশি হজযাত্রী। আজ (১১ মে) শেষ হচ্ছে ভিসা আবেদনের দ্বিতীয় দফার বর্ধিত সময়। অর্থাৎ শেষ দিনে ভিসা দিকে তাকিয়ে আছেন এই বিশাল সংখ্যক হজযাত্রী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজ এজেন্সিগুলো সৌদি আরবে মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করতে গাফিলতি করেছে। কম রেটে বাড়ি ভাড়া করার জন্য শেষ সময়ে এসে অপেক্ষা করছে। এছাড়া হজ এজেন্সিগুলোর বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের ভিসা আটকে দেয় সৌদি সরকার। সেই ভিসার জট খুলতে দেরি হওয়ায় অনেক ইচ্ছা থাকার পরও বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। এতে হজযাত্রীর ভিসা আবেদন করতে পারেনি এজেন্সিগুলো। কারণ হজ ভিসা আবেদনের পূবশর্ত হলো সৌদিতে হজযাত্রীর বিপরীতে বাড়ি বাড়ার চুক্তি থাকতে হবে। বাড়ি ভাড়া না করলে ভিসা আবেদন করা যায় না।
ভিসা সহজ করতে দ্বিগুণ হলো প্রতিস্থাপন কোটা
নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী মারা গেলে কিংবা গুরুতর অসুস্থ হলে তার বদলি হিসেবে অন্য কাউকে হজ করার বিধান রয়েছে। যাকে রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) কোটা বলা হয়। সেই কোটা ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছরে হজের ভিসা নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিস্থাপন কোটা ২০ শতাংশ করা হয়েছে। শেষ সময়ে যারা নানা কারণে ভিসার আবেদন করতে পারছে না তাদের বদলে অন্যদের প্রতিস্থাপন করা যাবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী হজ পালন করতে নিবন্ধন করেছেন। ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এর আগে ৮ মে চলতি বছরের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।