প্লে-অফ নিশ্চিত করতে শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৭ রান। আর জয়ের জন্য তখনো প্রয়োজন ৩৫। ক্রিজে তখন সেট হওয়া দুই ব্যাটার রবীন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। যশ দয়ালের করা শেষ ওভারটির প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বেঙ্গালুরুর গ্যালারি স্তব্ধ করে দিলেন ধোনি। ৫ বলে চেন্নাইয়ের চাই আরও ১১। পরিস্থিতি অনুযায়ী খুব কঠিন কিছু না। কোহলিদের চোখে-মুখে হতাশা। খুব কাছাকাছি এসেও যেন স্বপ্নভঙ্গের সুর বাজছিল। তবে দ্বিতীয় বলেই ধোনিকে ফিরিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন দয়াল। আইপিএলের সর্বশেষ আসরে রিঙ্কু সিংয়ের হাতে পাঁচ ছক্কা হজম করা ভারতীয় এ বোলার এদিন দুর্দান্ত বোলিংয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে প্লে-অফেও নিয়ে গেলেন। শেষ চার বলে ডটই দিলেন তিনটি।
দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে উত্তাপ আরও বাড়িয়েছে প্লে-অফের অঙ্কে। কার্যত নকআউট ম্যাচে রূপ নিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর লড়াই। এমন ম্যাচে ২৭ রানের জয়ে প্লেঅফ নিশ্চিত করেছে বেঙ্গালুরু।
টানা ছয় হারের পর যেন আরেকটা ব্যর্থ আসর শেষের অপেক্ষায় ছিল কোহলিরা। তবে এরপরের গল্পটা অবিশ্বাস্য এক কথায়। টানা ছয় হার হজমের পর পরপর ছয় ম্যাচ জিতে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফে পৌঁছে গেছে আরসিবি।
ঘরের মাঠ চিন্নাস্বামীতে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ২১৮ রানের বড় পুঁজি গড়েছিল আরসিবি। দলের হয়ে ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন ফ্যাফ ডু প্লেসি। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে প্লে-অফে যাওয়ার লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানেই ছিল চেন্নাই। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে জিততে বড় টার্গেট হলেও ২০১ রান করলেই প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে যেত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। সে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৯১ রানেই থেমেছে ধোনিরা। অর্থাৎ ১০ রান স্বল্পতায় কপাল পুড়েছে তাদের।
এর আগে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে চিন্নাস্বামীতে আগ্রাসী ছিলেন বিরাট কোহলি ও ডু প্লেসিরা। বড় লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখেই খেলেছেন একের পর এক বিগ শট। প্রথম তিন ওভারেই আসে ৩১ রান। এরপর বৃষ্টি বাধায় কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। তবে তাতে ওভার কাটা যায়নি।
বৃষ্টির পরও নিজের আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন কোহলি। স্ট্রাইকরেট নিয়ে চলা সমালোচনার জবাব দিলেন পরিস্থিতি অনুযায়ী আগ্রাসী এক ইনিংস খেলে। ২৯ বলেই অবশ্য থামে তার ইনিংস। করেছেন ৪৭ রান। অন্যদিকে, ফাফ ডু প্লেসিও খুব একটা ধীরগতিতে ছিলেন না। তবে কোহলির বিপরীতে খানিক ম্লানই ছিল তার ইনিংস।
কোহলি না পারলেও বেঙ্গালুরু অধিনায়ক পেয়ে যান ফিফটি। সেটাকে যদিও টেনে বড় করা হয়নি। ৩৯ বলে ৫৪ করে থামে তার ইনিংস। ক্যামেরন গ্রিন এবং রজত পতিদার এরপর খেলেছেন দুর্দান্ত দুই ইনিংস। রানের অঙ্কে বড় না হলেও দলের স্কোরের চাকা ঘুরিয়েছে তাদের ওই দুই ক্যামিও। ২৩ বলে ৪১ রজতের। আর ১৭ বলে ৩৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন গ্রিন। ম্যাক্সওয়েল আর দীনেশ কার্তিকও খেলেছেন ২০০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে। তাতেই বেঙ্গালুরু পেয়ে যায় ২১৮ রানের বড়সড় এক পুঁজি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ম্যাক্সওয়েলের বলে ফাইন লেগ অঞ্চলে খেলতে গিয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন তিনি। ওয়ানডাউনে নামা ড্যারিল মিচেলও রান পাননি। ৪ রান করে আউট হন তিনি। দ্রুত দুই উইকেট পতনের পর চেন্নাইয়ের ইনিংস সামলান রাচিন রবীন্দ্র ও অজিঙ্কা রাহানে। ভালোই খেলছিলেন তারা। এমন সময় বেঙ্গালুরুকে ম্যাচে ফেরান লকি ফার্গুসন। নিজের প্রথম বলেই ৩৩ রানের মাথায় রাহানেকে আউট করেন তিনি। অন্যদিকে স্বপ্নিল সিংহ ও ম্যাক্সওয়েল চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের হাত খুলে খেলার সুযোগ দিচ্ছিলেন না।
ম্যাক্সওয়েলের এক ওভারে ১৯ রান নিয়ে চেন্নাইকে স্বস্তি দিয়েছিলেন রাচীন রবীন্দ্র। অর্ধশত রানও পূর্ণ করেন কিউই এ ওপেনার। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শিবাম দুবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ৬১ রানের মাথায় রান আউট হন রাচিন। পরের ওভারেই আউট হন শিবম। ১৫ বলে ৭ রান করেন তিনি। ১১৯ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় চেন্নাইয়ের।
জাদেজা ও স্যান্টনার জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্যান্টনারের শট শূন্যে লাফিয়ে তালুবন্দি করেন ডুপ্লেসি। বোঝা যাচ্ছিল এই ম্যাচ জিততে কতটা মরিয়া তারা। স্যান্টনার আউট হলে নামেন ধোনি। প্লে-অফে উঠতে ২৪ বলে ৬৩ রান করতে হতো চেন্নাইকে। যশ দয়ালের এক ওভারে ওঠে ১৩ রান। শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ৫০ রান। ধোনি, জাদেজা ক্রিজে থাকায় স্বস্তিতে ছিল না বেঙ্গালুরু। সিরাজ ১৮তম ওভারে দেন ১৫ রান।
শেষ দুই ওভারে চেন্নাইকে করতে হতো ৩৫ রান। ধোনি বড় শট খেলতে না পারলেও জাদেজা সপাটে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। আরও একবার চেন্নাইয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ফার্গুসনের সেই ওভারে উঠে ১৮ রান। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৭ রান। মাত্র ৭ রান দিয়ে বেঙ্গালুরুকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিলেন যশ দয়াল।