ঘর সাজানোর অন্যন্য উপকরণের মধ্যে অ্যাকোয়ারিয়াম অন্যতম। ঘরে বাড়তি আভিজাত্য আনতে এর জুরি নেই। তবে অনেকেই এর সঠিক পদ্ধতিতে যত্ন নিতে জানেন না। তাই যাদের বাড়িতে অ্যাকোয়ারিয়াম আছে বা যারা কিনতে চাচ্ছেন তারা এর যত্ন নিতে কী কী করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের আয়োজনে
জলচর প্রাণী মাছ সংরক্ষণ করার বিশেষ ধরনের জায়গা হিসেবে পরিচিত এটি। এ ছাড়া যেসব প্রাণী জলে বাস করে যেমন ব্যাঙ, শামুক, কচ্ছপ এগুলোও শৌখিন মানুষ শখের বশবর্তী হয়ে সংরক্ষিত করে এই শখের অ্যাকোয়ারিয়ামে।
আমাদের শহরকেন্দ্রিক জীবনধারায় ড্রইং রুমে এটি সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে নিঃসন্দেহে। ঘরের কোণের অ্যাকোয়ারিয়ামে জীবন্ত বাহারি রঙের মাছ গুলো যখন সাঁতার কাটে তখন সমুদ্রের তলদেশের একটা স্বাদ সহজেই পাওয়া যায়।
অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ পালার শখ অনেকেরই আছে। বাহারি বিভিন্ন মাছ কিনে এনে ঘরের এক কোণে বড়, ছোট, মুখ খোলা গোলাকার বা বন্ধ চারকোনো অ্যাকোয়ারিয়াম মাছ পোষার জন্য কিনতে পারেন। এটা আপনার শৌখিনতারই পরিচয় দেবে।
কিন্তু এই শৌখিনতার পাশাপাশি চলে আসে সেই জিনিসটার প্রতি যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণও। যার জন্য আপনাকে অনেক সময় ব্যেয় করতে হবে এর পেছনে।
যেহেতু অ্যাকোয়ারিয়াম পরিষ্কার করা একটু ধৈর্যের ব্যাপার তাই যারা বাড়িতে অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ পোষেণ বা পুষবেন তারা এর জন্য বিরক্ত হবেন না। কারণ সঠিক পরিচর্যা না হলে অ্যাকোয়ারিয়াম আবর্জনাতে ভরে যেতে পারে। খারাপ হয়ে যেতে পানির মানও। এর ফলে মাছের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় মাছ মারাও যায়। তাই অ্যাকোয়ারিয়াম পরিচর্যায় কয়টি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
প্রথমেই যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেবেন সেটি হলো মাছ দেখতে ভালো লাগলেই কিনে ফেলা উচিত নয়। কোন মাছ কোন উষ্ণতার পানিতে থাকে, কতটা স্থান প্রয়োজন কিংবা একাধিক প্রজাতির মাছ একই সঙ্গে থাকতে পারে কি না তা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি মাছ কেনার সময় আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন অ্যাকোয়ারিয়ামের সাইজ অনুযায়ী মাছের সংখ্যা যেন বেশি না হয়ে যায়।
সব মাছ কিন্তু একই ধরনের খাবার খায় না। এমনকি এক এক ধরনের মাছ পানির এক এক স্তর থেকে খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করে। কাজেই অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকা মাছের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক খাবার না মিললে যেমন মাছের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে তেমনই অতিরিক্ত খাবারও তৈরি করতে পারে সমস্যা। আবার এই খাবার অ্যাকোয়ারিয়ামে বাড়াতে পারে আবর্জনাও। তাই কোন মাছ কিনলে সহজেই এর যত্ন নিতে পারবেন সে অনুযায়ী মাছ এবং খাবার কিনুন।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলে পছন্দ মতো অ্যাকোয়ারিয়াম কিনে তা বাড়িতে সেট করে নিন। তবে সঙ্গে সঙ্গেই মাছ ছাড়তে যাবেন না যেন। অবশ্যই আপনাকে অন্তত এক সপ্তাহ আগে সাইক্লিং করে তারপর মাছ ছাড়তে হবে।
পানির মান মাছের জন্য উপযুক্ত করে তোলার পদ্ধতির নামই সাইক্লিং। বাজার থেকেই এই উপাদান কিনতে পারবেন। তবে অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ থাকা অবস্থায় কখনওই সাইক্লিং করা উচিত নয়। কেননা মাছ বেঁচে থাকার পরিবেশ মাছ ছাড়ার আগেই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। আর এই সাইক্লিং পানিতে অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে আবর্জনাকে বিয়োজিত করে মাছের বসবাসের উপযোগী করে তোলে।
অ্যাকোয়ারিয়ামের পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট কিংবা নাইট্রেট জাতীয় যৌগ উপস্থিত থাকে। কিন্তু এই ধরনের যৌগগুলোর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে মাছের স্বাস্থ্যের পক্ষে তা খারাপ হতে পারে।
একই ঘটনা ঘটতে পারে পানির অম্লতার ভারসাম্য নষ্ট হলেও। এই পদার্থগুলোর মাত্রা মাপার জন্য বিশেষ ধরনের কিট কিনতে পাওয়া যায় বাজারে। প্রতি সপ্তাহে এই উপাদানগুলোর মাত্রা পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। পানির মান ঠিক রাখতে প্রতি সপ্তাহে অ্যাকোয়ারিয়ামের এক তৃতীয়াংশ পানি বের করে দিয়ে পরিশুদ্ধ পানি ঢালতে হবে।
এ ছাড়া অ্যাকোয়ারিয়ামে সঠিকভাবে মাছ ছাড়া হয়ে গেলেও নিয়মিত নিতে হবে এর যত্ন। এর জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামের তলদেশে থাকা পাথর নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও অত্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার তা পরিষ্কার করুন। বর্তমানে সাইফন কিংবা ভ্যাকিউম যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই এই তলদেশের পাথরের ময়লা পরিষ্কার করা যায়। তাই দেরি না করে ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে আজই ঘরে নিয়ে আসতে পারেন শখের অ্যাকোয়ারিয়ামটি।

