দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ বলা হয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে। এই বছর সাফ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ২০২৬ সাল পর্যন্ত স্থগিত হয়েছে। তবে আগামী বছরও সাফ আয়োজনে রয়েছে নানামুখী সংকট।
আগামী বছর জুন-জুলাইয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে। ফলে জুনের আগে সাফ আয়োজন করা সম্ভব নয়। জুনের পর ফিফা উইন্ডো রয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। সাফ সেই সময় টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। সাফের সাধারণ সম্পাদক পুরুষোত্তম ক্যাটেল বলেন, ‘গতকাল সাফের নির্বাহী সভায় আগামী বছরের সূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে সাফ হওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মিলিয়ে ১৬ দিনের বড় ফিফা স্লট রয়েছে। আর হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে হলে আগস্টে গ্রুপ পর্ব, সেপ্টেম্বর ফিফা উইন্ডোতে সেমিফাইনাল-ফাইনাল।’
আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না হলেও সাফ হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফরম্যাট থেকে সরে আসছে। সাফের মার্কেটিং পার্টনার স্পোর্টস ফাইভ পৃষ্ঠপোষকতায় আগ্রহী নয়। কারণ হিসেবে তারা মার্কেট মন্দাকে সামনে এনেছে। গতকালের নির্বাহী সভায় এনিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে দুই পক্ষের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সাফ আলাদা স্পন্সর নিয়ে একটি দেশে টুর্নামেন্ট করতে চায়।
পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বড় সংকট সূচিতেও। আগামী বছর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর এশিয়ান গেমস। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশই ফুটবলে অংশগ্রহণ করে। গেমসে অ-২৩ ফুটবলারদের পাশাপাশি তিন জন সিনিয়র ফুটবলার খেলতে পারেন। জাতীয় দলের অনেক ফুটবলারই গেমসে অংশগ্রহণ করবেন। ফলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর উইন্ডোতে সাফ আয়োজন করা অসম্ভবই।
বাফুফের সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সাফের প্রধান। তিনি আগামী বছর সাফ আয়োজন করতে চানই, ‘এই বছর হয়নি, আগামী বছর করতেই হবে। বাস্তবিকভাবে বিশ্বকাপের আগে করা সম্ভব নয়। বিশ্বকাপের পর সুবিধাজনক সময় এটা করতে হবে। স্পন্সরের চেয়ে সময় মেলানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
২০২৬ সালে সেপ্টেম্বরের পর ফিফা উইন্ডো রয়েছে ৯-১৭ নভেম্বর। ৯ দিনে টুর্নামেন্ট শুরু করে শেষ করা কঠিন। এরপরও সাফ ফিফা উইন্ডোর বাইরে ২-৩ দিন অতিরিক্ত সময় নিয়ে খেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। আগামী বছর এছাড়া সাফ আয়োজনের আর স্লট সেভাবে নেই।
আগামী বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনে নানাবিধ সংকট থাকলেও সম্ভাবনা শেষ হয়নি। তবে সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে তেমন আশা দেখছেন না সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ‘বাংলাদেশ, ভুটান ছাড়া অন্য দেশে ক্লাব লিগ হচ্ছে না। ওই দেশগুলোর লিগ না হলে ক্লাব টুর্নামেন্ট আয়োজন করা কঠিন।’
নেপালসহ আরো দুটি দেশে ঘরোয়া লিগ এটা যেমন সংকট, পাশাপাশি সাফের আলাদা সংকট পৃষ্ঠপোষকতা। স্পোর্টস ফাইভের সঙ্গে ২০২৯ সাল পর্যন্ত নারী, পুরুষ সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, পুরুষ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অ-২৩ টুর্নামেন্ট পৃষ্ঠপোষকতার চুক্তি। স্পোর্টস ফাইভ না থাকলে এই টুর্নামেন্টগুলোও শঙ্কার মধ্যে পড়বে। সিনিয়র সাফের পৃষ্ঠপোষকতা জোগাড় করতে পারলেও অন্য আসরগুলো মাঠে নামানো বেশ কঠিনই।
২০২৬ সালে ৩১ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। ওই উইন্ডোতে আরেকটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির জন্য ১-৯ জুন একটি উইন্ডো রয়েছে। বিশ্বকাপের আমেজ থাকায় বিশ্বকাপ না খেলা অনেক দেশই ম্যাচ খেলতে ও আয়োজনে আগ্রহী হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে সাফ না হয়ে এশিয়ান গেমস হলে জাতীয় দলের খেলা আয়োজনের সম্ভাবনা কম। জাতীয় দলের খেলা না হলে র্যাংকিংয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সেই অর্থে নভেম্বর উইন্ডোই মূলত ভরসা।
আগামী বছর জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডের পুরুষ ও নারী ফুটসাল দিয়ে সাফের প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ফেব্রুয়ারিতে অ-১৯ মহিলা, মার্চে অ-২০, এপ্রিলে নারী অ-১৭, মে মাসে নারী সাফ, আগস্টে অ-১৭ সাফের সূচি রয়েছে। আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি টুর্নামেন্টের সময়সূচি প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে সাফের।
নারী সাফে বাংলাদেশ টানা দুই বার চ্যাম্পিয়ন। এবার হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের সুযোগ। বিশ্বকাপের আগে নারী সাফ আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল হয় দেখার বিষয়। নারী সাফের ভেন্যু এখনো ঠিক হয়নি।


