খুলনা বিভাগের গবাদি পশু চাষিরা এবারের ঈদুল আজহার সামনে লাভজনক ব্যবসার আশায় রয়েছেন। উৎসবের আগামিকালে বলিদানের পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে প্রাণ ফিরেছে।
পশুপালন অধিদপ্তরের (ডিওএলএস) তথ্যে জানা যায়, এ বছর খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মোট ১৪.৩৪ লাখ বলিদানের পশু প্রস্তুত করা হয়েছে, যা নির্ধারিত চাহিদা ১০.৪৭ লাখের চেয়ে প্রায় ৪ লাখ বেশি।
গত বছরের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি; যেখানে ২০২৪ সালে ১১.৮২ লাখ পশু প্রস্তুত ও ৮.০৯ লাখ বিক্রি হয়েছিল।
চাষি ও সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী যে, লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ফেটেনিং বন্ধে সরকারি পদক্ষেপের কারণে এবারের ব্যবসা আরও লাভজনক হবে।
খুলনার ডিওএলএস পরিচালক ড. নুরুল্লাহ মো. আহসান বিএসএসকে জানান, “কঠোর নজরদারি এবং পশু স্বাস্থ্য উন্নতির ফলে চাষিদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। রাসায়নিক ফেটেনিং বন্ধ ও লাম্পি স্কিন রোগের কমিয়ে আনার কারণে আমরা আশা করছি, এই ঈদে ১০ লাখের বেশি পশু বিক্রি হবে এবং প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জন সম্ভব।”
প্রস্তুত পশুর মধ্যে রয়েছে ৪.১৮ লাখ ষাঁড়, ০.৪৬ লাখ বাছুর, ০.৭৪ লাখ গাভী, ০.০৬ লাখ মহিষ, ৮.৩৯ লাখ ছাগল ও ০.৫১ লাখ ভেড়া।
এদের মধ্যে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে ফেটানো পশু প্রায় ২.২১ লাখ। তবে, বাড়তি খাবারের মূল্য অনেক চাষির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুমুরিয়া উপজেলার গোলনা গ্রামের গবাদি পশু চাষি মাহতাব উদ্দিন বলেন, “শখ থেকে শুরু করা এই ব্যবসা এখন সম্পূর্ণ পেশায় পরিণত হয়েছে। এবছর আমি ২১টি গাভী প্রস্তুত করেছি, যাদের অধিকাংশের ওজন ৬০০ থেকে ৯০০ কেজির মধ্যে।”
তিনি জানান, গাভিগুলো জৈব পদ্ধতিতে পালন করেছেন, গম, মটর, ডাল ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন খাদ্য দিয়ে। পাশাপাশি খড় ও ঘাসও ব্যবহৃত হয়েছে।
মাহতাব উদ্দিন আরও বলেন, “প্রতি গাভীর দৈনিক খাবার ও শ্রম খরচ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা গাভীর আকার অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। খাবারের দাম গত বছরে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
গমের গুড়া, ডাল ও চালের ভূস্করকসহ প্রধান খাদ্য উপকরণের দাম সাম্প্রতিক মাসে ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা চাষিদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার গবাদি পশু চাষি আলাউদ্দিন সোহাগ জানান, “দুধের খাবারের দাম প্রতি ব্যাগে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা বেড়েছে। গবাদি পালন খরচ গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।”
খুলনা শহরের ফারাজীপাড়া এলাকার মাংস ব্যবসায়ী মোঃ রোবিউল হাসান মুন্না বলেন, “বর্তমানে প্রতি মন (৩৭ কেজি) দুধের মাংস Tk ৩০,০০০ দরে বিক্রি হচ্ছে। ফেটেনিং খরচ Tk ২৪,০০০ থেকে Tk ২৬,০০০ পর্যন্ত হওয়ায়, চাষিরা প্রতি মন কমপক্ষে Tk ৪,০০০ থেকে Tk ৫,০০০ লাভ না করলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে।”
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও খুলনায় গবাদি পশু পালন লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিস্তার লাভ করছে।
ডিওএলএস পরিচালক বলেন, “ঈদুল আজহার সময় হলো গবাদি পশু চাষিদের জন্য বছরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সুযোগ।”
বিভাগের ১০ জেলায় যথাক্রমে খুলনায় ১,৬৩,০৩১, বাগেরহাটে ৮৫,০৪৮, সাতক্ষীরায় ১,০০,৬০১, যশোরে ১,১৪,৫৭৪, ঝিনাইদহে ২,৬৩,১২৯, মাগুরায় ৮১,৪৭৩, নড়াইলে ৫৪,৫৮৫, কুষ্টিয়ায় ২,০০,৯৪৮, চুয়াডাঙ্গায় ১,৯৯,৪৩৬ এবং মেহেরপুরে ১,৭১,৭৫৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে।
অবৈধ গবাদি পশুর আমদানি একটি উদ্বেগজনক বিষয় থাকলেও বিজিবির কঠোর নজরদারিতে স্থানীয় বাজার সুরক্ষিত রয়েছে, যা চাষিদের আরও বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে।
এ বছরও অনলাইন গবাদি পশু বাজার চালু থাকবে, যা চাষিদের বিক্রয় ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।
সুস্থ ও নিরাপদ পশু পালন ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে খুলনার গবাদি পশু চাষিরা এবারের ঈদুল আজহা মূসুমে লাভবান হওয়ার আশা করছেন।