সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় কোনো ধরনের নিয়মনীতি অনুসরণ না করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন চাকরি করছেন এক কর্মকর্তা। উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতাও নিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়; দীর্ঘ সময় দুই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিয়েছেন পদোন্নতিও। শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ পেয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দায়িত্বও। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তার এ ধরনের কাজের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্টরা। ঘটনাটি ঘটেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা হাউজ অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এইচবিআরআই)। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রজেক্ট অফিসার ও বর্তমানে সহকারী আর্কিটেক্ট ড. সৈয়দা সায়কা বিনতে আলমের বিরুদ্ধে তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এই কর্মকর্তার চাকরিসংক্রান্ত জালিয়াতির জন্য পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে এইচবিআরআই কর্তৃপক্ষ।
এইচবিআরআইয়ের মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘সৈয়দা সায়কা বিনতে আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে আমরা বিস্তারিত তদন্ত করেছি। তদন্তে এই কর্মকর্তার চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া নবম গ্রেডের এই কর্মকর্তাকে নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আগের ডিজি (শামীম আখতার) এ কাজটি করেছেন। সব বিষয় মিলিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় যা ভালো মনে করবে তাই করবে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দা সায়কা বিনতে আলম ২০১০ সালের ২৬ মে সহকারী আর্কিটেক্ট হিসেবে এইচবিআরআইয়ে যোগদান করেন। বেশ কয়েক বছর পার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে কর্মরত থাকার অভিযোগ ওঠে। এরপর এইচবিআরআই থেকে তার দ্বিতীয় কর্মস্থল বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় কর্তপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির উত্তরে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সায়কা বিনতে আলম ২০০৭ সালের ১ জুন থেকে ২০১০ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত খন্ডকালীন কর্মরত ছিলেন। এরপর ২০১০ সালের ১৮ জুন থেকে ২০১২ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্ণকালীন লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি শিক্ষা ছুটি নেন। শিক্ষা ছুটিতে থাকাকালে তিনি পদোন্নতিও পান। একই সময়ে তিনি এইচবিআরআইয়ে কর্মরত ছিলেন। একপর্যায়ে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার বিষয়ে লিখিতভাবে কারণ জানতে চাওয়া হলে এই কর্মকর্তা তা স্বীকার করে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে এইচবিআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সায়কা বিনতে আলমের যোগদান হয়েছিল অনেক আগেই। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এ কর্মকর্তা দেশের বাইরে থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে যোগদান করেন। এরপরই সংস্থার প্রকল্প কর্মকর্তার পদটিও খালি হয়ে যায়। তাই তাকে (সায়কা বিনতে আলম) চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ডিপিসির একজন সদস্যের একটু ভিন্ন মত ছিল। এখানে মূলত বড় ধরনের কোনো অনিয়ম হয়নি।’ এইচবিআরআইয়ের আগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বিস্তারিত তারা (মন্ত্রণালয়) বলতে পারবে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এইচবিআরআইয়ের সহকারী আর্কিটেক্ট ড. সৈয়দা সায়কা বিনতে আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের অফিসের অর্ধেকের বেশি লোকজনই অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এখন শুধু আমাকে নিয়ে কেন তদন্ত হলো? আর তদন্তে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই নানা রকম অনিয়মে সঙ্গে জড়িত। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক নাফিজুর রহমান নিজেই ১৬-১৭ লাখ টাকা খরচ করে এখন অডিট আপত্তির মুখোমুখি হয়েছেন। অন্যরাও নানা রকম অনিয়মে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরির পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশবিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছি; তা যদি অন্যায় হতো তাহলে কর্তৃপক্ষ আমাকে নিষেধ করতে পারত। তা তো করেনি। যখন আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হলো; তখন আমি নিজের ভুল স্বীকার করে অন্য চাকরি থেকে সরে এসেছি। এরপরও তারা এখন বিষয়টি নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেছে। আমাকে পদাবনতি করা হয়েছে। যে রুমে বসতাম; সেখানেও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। বছরখানেক ধরে আমার চাকরিজীবনে বেশ “ঝড়” যাচ্ছে।
পিএস/এনআই