ভারতে ১৯৯৪ সালে শাকিরা খলিলি হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে। তার আগে প্রায় তিন বছর নিখোঁজ ছিলেন ৪৬ বছর বয়সি এ নারী। তার খুনের বিবরণ শুনে রীতিমতো শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ।
দু’বার বিয়ে করেছিলেন শাকিরা। তার দ্বিতীয় স্বামীই তাকে খুন করেছিল। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় মুরলিমনোহর মিশ্রকে। পরে ওই সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
১৯৯১ সালে শাকিরা নিখোঁজ হন। তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা। দ্বিতীয় স্বামী মুরলিকে প্রশ্ন করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পুলিশ পরে জানতে পারে, ওই বছরই শাকিরাকে খুন করা হয়েছিল।
শাকিরা ও তার দ্বিতীয় স্বামী মুরলিমনোহর মিশ্র
১৯৪৫ সালে চেন্নাইয়ে এক ইরানি মুসলমান পরিবারে জন্ম শাকিরার। পরে তারা সিঙ্গাপুরে চলে যান। পরাধীন ভারতে মাইসুরু, জয়পুর ও হায়দরাবাদের দেওয়ান ছিলেন শাকিরার দাদা মির্জা ইসমাইল।
১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শাকিরা। তার স্বামী আকবর মির্জা খলিলি ছিলেন সম্পর্কে শাকিরার তুতো ভাই। প্রেমের টানে ভাইয়ের গলাতেই মালা দেন শাকিরা। দীর্ঘ ১৯ বছর চুটিয়ে সংসার করেন তারা।
টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি ছিলো শাকিরার প্রথম স্বামী আকবর মির্জার। তিনি ভারতীয় বনবিভাগে চাকরি করতেন। পরে ইরানে ভারতীয় দূত হিসেবে চলে যান। এর পরেই তাদের বিয়ে ভাঙে। শাকিরা-আকবরের চার সন্তান ছিলো।
১৯৮৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদের দু’বছর পর ৮৬-র এপ্রিল মাসে মুরলিমনোহর মিশ্রকে বিয়ে করেন শাকিরা। যদিও তাদের পরিচয় ১৯৮২ থেকেই। স্বামী শ্রদ্ধানন্দ নামেও পরিচিত ছিলো শাকিরার দ্বিতীয় স্বামী।
শাকিরার সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সব কিছুতেই অধিকার পেয়ে গিয়েছিল মুরলি। আগের পক্ষের সন্তানদের নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগে থাকত বলে জানতে পারে পুলিশ।
বিয়ের পাঁচ বছর পর, ১৯৯১ সালে শাকিরা হঠাৎ নিখোঁজ হন। মুরলির সঙ্গে কথা বলেও মায়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না শাকিরার মেয়েরা। ১৯৯২ সালে বেঙ্গালুরুর অশোক নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তারা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও শাকিরা কোথায়, তা নিয়ে কোনো সদুত্তর দেয়নি মুরলি ওরফে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ। তিনি জানান, তার স্ত্রী কোথাও ছুটি কাটাতে গেছে। কবে ফিরবে, তা তিনি জানেন না।
১৯৯৪ সালে কর্নাটক পুলিশ শাকিরার কঙ্কাল উদ্ধার করে তারই বাড়ির উঠোন থেকে। সেখানে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল তাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৯৯১ সালের ২৮ এপ্রিল শাকিরাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, আগে থেকে শাকিরার কবর খুঁড়ে রেখেছিল মুরলি। বাড়ির উঠোনে গভীর গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে রাখা হয়েছিল একটি বড়সড় বাক্স। ওই বাক্সে ছিলো একটি মোটা চাদর। পুলিশ যখন মাটি খুঁড়ে দেহাবশেষ উদ্ধার করে, দেখা যায়, শাকিরার কঙ্কাল খিমচে ধরে আছে সেই চাদরটি। এ ছাড়াও আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখার পর পুলিশের অনুমান, জীবন্ত অবস্থায় পুঁতে দেওয়া হয়েছিল শাকিরাকে।
পরে খুনের কথা স্বীকার করেন মুরলি। শাকিরার লাশ কবর থেকে বের করার ভিডিও করা হয়েছিল, যে নজির খুনের তদন্তে ওই প্রথম। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় এ মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
২০০৫ সালে কর্নাটকের নিম্ন আদালত শাকিরার খুনিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাতে সায় দেয় ভারতের হাইকোর্ট। কিন্তু পরে ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় মুরলিকে।
কর্নাটকের উচ্চ আদালত শাকিরা হত্যাকাণ্ডকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে উল্লেখ করেছিল। বলা হয়েছিল, সমাজে তীব্র ভয়ের পরিবেশ করেছে এ হত্যাকাণ্ড। তাই এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য।
শাকিরার খুনের মামলায় প্রথম ডিএনএ টেস্ট এবং লাশ কবর থেকে তোলার ভিডিও আদালতে প্রমাণ হিসাবে গ্রাহ্য হয়েছিল। সে দিক থেকেও এ মামলাটি স্মরণীয় হয়ে আছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


