ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে কোনো প্রকার সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে চীনকে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার (১৮ মার্চ) ভিডিও কলে প্রায় দুই ঘণ্টা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন।
এ সময় শি জিন পিংকে সতর্ক করে বাইডেন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করলে এর ফল ভোগ করতে হবে চীনকেও।
এ সময় প্রচ্ছন্ন ভাষায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে চীনের বিরুদ্ধেও এমন পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি উঠে আসে বাইডেনের সুরে।
হোয়াইট হাউজ সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো না চললে চীনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মাত্রার নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও। তবে বাইডেনের এসব হুমকি ধামকি শেষ পর্যন্ত হিতে বিপরীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষ করে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পর চীনকেও যুক্তরাষ্ট্রের একই ভাষায় হুমকি দুই দেশকে আরও কাছাকাছি অবস্থানে আনতে পারে। পাশাপাশি বাড়তে পারে তাদের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর মাত্র দুই মাস আগেও পশ্চিমাদের যৌথভাবে মোকাবেলার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছিলেন পুতিন ও শি জিনপিং।
এ পরিস্থিতিতে বাইডেনের হুমকিতে ভীত হয়ে পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন শি জিনপিং, বিষয়টি এ রকম নাও হতে পারে। বিশেষ করে এই দুই নেতার মধ্যে এক ধরনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত ৩৮ বার সামনা-সামনি বৈঠক করেছেন পুতিন-জিনপিং।
পাশাপাশি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তাদের দুজনেরই মনোভাব একই রকম। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার ব্যাপারে দুইজনই আগ্রহী।
ইউক্রেনে পুতিনের আক্রমণ শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই দুই দেশ ৫ হাজার শব্দের এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, তাদের এই সম্পর্কের কোন সীমানা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে যৌথভাবে দাঁড়ানোর কথাও উঠে আসে এই বিবৃতিতে।
আরও বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে এমন কোনো নিষিদ্ধ এলাকা নেই যেখানে দুই দেশ একে অপরকে সহায়তা করতে পারে না।
শীতকালীন অলিম্পিকের সময় চীন সফরে যান পুতিন। এ সময় অনুষ্ঠিত হয় পুতিন ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক। বৈঠকে ইউক্রেন ও তাইওয়ান ইস্যুতে একে অপরকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা।
এদিকে বাইডেনের সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠকের মধ্যেই তাইওয়ানের দিকে তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন। বাইডেন ও শি’র আলাপের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তাইওয়ান প্রণালী পাড়ি দিয়েছে চীনের বিমানবাহী রণতরী শ্যানডং।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাইওয়ান ইস্যুকে।
এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ যতটা সহজে সম্ভব হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে চীনের বিরুদ্ধে একইভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ততটা সহজ নাও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, রাশিয়ার অর্থনীতির আকার যেখানে মাত্র এক লাখ ৭১ হাজার কোটি ডলারের সেখানে চীনের অর্থনীতির আকার এর বহুগুণ বেশি। ১৮ লাখ ৪৬ হাজার কোটি ডলার এর জিডিপি নিয়ে অর্থনৈতিক বিশ্বে চীনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই।
চীনের অর্থনৈতিক আয়তন এবং সারা বিশ্বে এর প্রভাব বিবেচনা করলে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে অনেক বেশি। এজন্য বিভিন্ন দেশের সরকার এবং সাপ্লাই চেনের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল অনেক পশ্চিমা কোম্পানিও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে।
এর পাশাপাশি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে ৫৫৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়।
সামরিক দিক থেকেও চীন ও রাশিয়া শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে তের লাখ সেনার বিপরীতে চীনের আছে ২০ লাখেরও বেশি সৈন্য। আর রাশিয়ারও আছে দশ লাখ সেনা। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে ৫ হাজার ৫৫০টি। অপরদিকে এক রাশিয়ার হাতেই আছে ৬ হাজার ২৫৫টি পরমাণু ওয়্যারহেড। এছাড়া চীনেরও আছে ৩৫০টি।
যুক্তরাষ্ট্র সামরিক খাতে খরচ করে ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার যা সারা বিশ্বের সামরিক খাতে খরচের ৩৯ শতাংশ। তবে বিশ্বে এর পরপরই সামরিক খাতে অর্থ খরচ করে চীন। বছরে সামরিক খাতে ২৫২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তারা।
পিএসএন/এমঅাই