তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে কুমিল্লায় বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশে বড় জমায়েত করে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শনিবার ২৬ নভেম্বর নগরীর টাউন হল মাঠে বিভাগীয় সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান দলটির নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লার সমাবেশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় নেতারা রীতিমতো নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কর্মসূচি সফল করার। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন, সে বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। একেবারে তৃণমূল ওয়ার্ড পর্যন্ত ছুটে চলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। প্রস্তুতি সভা, পথসভা, লিফলেট বিতরণসহ নানান ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ কেন্দ্র করে দলে ফেরার জন্য মাঠে কাজ করছেন বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে কাজ করছেন তিনি। ১৫ থেকে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন তিনি। এছাড়া তার নির্মাণাধীন ৭৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যেখানে নেতাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে যারা আগে আসবেন তারা এখানে থাকতে পারবেন এবং তাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
কুমিল্লা গণসমাবেশে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিভাগের প্রতিটা ওয়ার্ডে গণসংযোগ চালানো হচ্ছে। এতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা তাদের। শুধু বিএনপির নেতা কর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষও এই সমাবেশে উপস্থিত হবেন মনে করছে দলটির নেতারা।
বিএনপির নেতারা জানান, কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও তার কোনো প্রভাব সমাবেশে পড়বে না। বিভাগের জেলাগুলো থেকে দুদিন আগেই নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে সমাবেশে যোগদান করবে। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে কুমিল্লায়।
আগামী শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে সাড়ে ৪টার মধ্যে কর্মসূচির কার্যক্রম শেষ করাসহ ১০টি শর্তে কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
শর্ত ১০টি হলো- মাইকের সংখ্যা সীমিত রাখা ও মিটিং-মিছিল না করা। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন বক্তব্য না রাখা। ব্যানার-ফ্যাস্টুন, পতাকা স্ট্যান্ড হিসেবে কোনো লাঠি ব্যবহার না করা এবং ব্যানার-ফ্যাস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করা। বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করা। যানবাহনসমূহ শহরের ভেতরে প্রবেশ না করানো। উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহার না করা। মোটর শোভাযাত্রা ও মিছিল না করা, রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকা। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতাদের ও আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে। স্টেজ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তারা ছাড়া অন্য কেউ সমাবেশ শুরুর আগে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ঢাকা মেইলকে বলেন, কুমিল্লার সমাবেশ সফল করার জন্য বিভাগের প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত। আমরা আশা করছি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে কুমিল্লায়।
কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু ঢাকা মেইলকে বলেন, সমাবেশের জন্য আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করলেও এর প্রভাব সমাবেশে পড়বে না। কারণ সমাবেশে আসার জন্য সব প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। বিভাগের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা দুদিন আগেই চলে আসবে। পূর্বে যেসব সমাবেশ হয়েছে সেখানে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে উপস্থিত হয়েছে, এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। কুমিল্লার এই বিভাগীয় সমাবেশ হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ।
কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি গ্রামে গ্রামেও প্রস্তুতি চলছে। নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে সমাবেশে যোগদান করবে, সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সমাবেশ সফল করতে কোনো শঙ্কা রয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব শঙ্কা অতিক্রম করেই নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করবে। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। কোনো শঙ্কার কাছে তারা হার মানবে না। তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে এবং সমাবেশ সফল করবে। ইতিমধ্যে যেসব সমাবেশ হয়েছে সেখানে গণপরিবহন, লঞ্চ, তিন চাকার গাড়ি বন্ধ করেও সমাবেশ আটকাতে পারেনি, কুমিল্লায়ও সম্ভব হবে না। এসব করে জনগণের পদযাত্রা আটকানো যাবে না এটা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে। কুমিল্লা বিভাগ বিএনপির ঘাঁটি। আমরা মনে করি ৬ থেকে ৭ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।