বই পড়া কি শুধুই ভালো অভ্যাস? নাকি আরও গুরুতর কিছু উপকারিতা নিহিত আছে বই আর মস্তিষ্কের এই মেলবন্ধনে? কেন আমরা বই পড়ব? অথবা চ্যালেঞ্জিং বই বেশি পড়ব? একটুখানি গভীরতা দিয়ে বই পড়ার অনেক উপকারিতা। এতে মাথা ঠাণ্ডা হয়, চোখ ও মনের প্রশান্তি আসে। কিছুটা মেডিটেশনের মতো কাজ করে এই অভ্যাস।
মাঝে মাঝে বোঝার ক্ষমতার চেয়ে একটু কঠিন অথবা চ্যালেঞ্জিং বই পড়লে মস্তিষ্কের চর্চা হয়। মস্তিষ্ক খাটিয়ে যেহেতু পড়ছি সেহেতু কোষগুলো সতেজ ও উদ্দীপ্ত হয়। ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের রিপোর্টও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।
বইয়ের বিভিন্ন শব্দ কিংবা গল্পের দিকে ফোকাস করলে মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম মনোযোগ ও সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা বৃদ্ধি-সংশ্লিষ্ট অংশের দারুণ অনুশীলন হয়।
যত বেশি বই পড়ি আমরা, তত বেশি আমাদের শব্দকোষ গঠিত হবে, তত আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটবে। প্রতিদিন একটু একটু ব্যায়াম করলে শরীরের যেমন উপকার হয়, ঠিক তেমনি মন দিয়ে পড়লে বা অংক কষলে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়।
আমরা একই জিনিস হয়ত ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে পড়তেই পারি। অনেক ক্ষেত্রে এটাই সহজলভ্য। কিন্তু টানা কয়েক ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের যে ক্ষতি হয় তা অপূরণীয়। যন্ত্রের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন হয় বৈকি, কিন্তু তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একটা সীমার মধ্যেই আমাদের ডিভাইস চালাতে হয়। তাই অনেক বেশি সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে পড়াটাও ক্ষতিকর। বই পড়ার এমন কোনই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
বইয়ের দিকে তাকিয়ে আমরা যখন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে যাই, তখন অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ মেলে। একটুখানি স্বস্তির পর কিন্তু আমরা চাইলে আবার দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা মোকাবিলার শক্তি পেতেই পারি। আমাদের সুবিশাল চিন্তার জগতকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে এই বই। অনেক রকম মজাদার, জীবনের সঙ্গে গাঁথা কিছু সাহিত্য বই আছে, যেগুলো পড়তে বসলে আমরা বাকি সব ভুলে যাই অনায়াসেই।
এভাবেই কিন্তু ঘটে মনের প্রস্ফুটন আর মেলে মানসিক প্রশান্তি।
প্রাত্যাহিক জীবনে যাদের ফোকাস কম, মেডিটেশান করা লাগে, তারা কিন্তু বই পড়া বা একটু জটিল অংক সমাধানের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করতে পারেন। ডিপ রিডিংয়ে ফোকাস বাড়ে কারণ আমরা কয়েকটি বিষয়কে একসঙ্গে করতে থাকি আর যোগসূত্র মেলাতে থাকি অন্যসব জাগতিক চিন্তা বাদ দিয়ে। এর মাধ্যমে আমরা অনেকক্ষণ এক জায়গায়ই মগ্ন থাকি, আর তাই ফোকাসটাও বাড়তে থাকে।
তাছাড়া সমস্ত কাজ যারা ডিভাইসে করে থাকেন, তাদের জন্য আরো বেশি জরুরি এই বিরতির। যেখানে বইবিলাস থাকবে। ডিভাইসকেন্দ্রিক প্রাত্যহিক কাজ মনকে রোবটিক বানিয়ে ফেলে। বিপরীত দিকে বইয়ের পাতা এনে দেয় আত্মতুষ্টি, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
ডিভাইসে বসে পড়তে থাকা অথবা টাইপ করা অথবা অফিসের কাজের নমুনা সবকিছু এক সময় অস্বস্তি নিয়ে আসে। তাই বই পড়ার অনুশীলন অনেক কাজে
দেবে সেসব ব্যস্ত মানুষকে।
যুগের পরিক্রমায় এখন বাজারে অনেক রকম বিস্ময়কর যন্ত্র আছে, যা বিভিন্ন রকম উদ্ভাবনের আলো দেখাচ্ছে। কিন্তু বইয়ের পাতা, ঘ্রাণ আর প্রতিক্রিয়াবিহীন নেশা তুলনাহীন। বইয়ের নেশা এক মধুর নেশা। যা বয়ে আনে শান্তি, জ্ঞাণের পসরা, আর আত্মার শুদ্ধি।
টিম পার্কসের বই “Where I am reading from: The changing world of books” টা আমরা পড়ে দেখতে পারি। সেখানে বলা হয়েছে বই পড়লে বা কিছু লিখলে কী কী উপকার পাওয়া যায়, কীভাবে জীবনে পরিবর্তন আসে।
মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও আছে এতে। এনা কোয়েন্ডিলেনের “How reading changed my life” অভূতপূর্ব একটি বই। এতে লেখক কীভাবে বিভিন্ন ধরনের বই থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তা বলেছেন, কীভাবে হাজার রকমের বইয়ের সঙ্গে সখ্য তাকে সামাজিক বিচার প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবতে ও লড়তে সহায়তা করেছে, তা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, তার জীবনের গভীরতম পরিবর্তন কীভাবে এই বই পড়া থেকেই এসেছে সে কথা।
জীবনকে বোঝার জন্য, জানার জন্য আমরা এই দুটি বই পড়ে দেখতে পারি।


