নয়ন ইসলাম
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষ মুহুর্তে নিজেদের পরিচিতি করতে মাঠে নেমেছে নির্বাচন ইচ্ছুক প্রার্থীরা। তবে বয়জষ্ঠ ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের সাথে নির্বাচন নিয়ে কম্পিটিশন করতে একঝাঁক তরুণ মুখ রয়েছে এবারের কাউন্সিলর নির্বাচনে। কাউন্সিলর পদে এসে সমাজকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চায় এ সকল তরুণ নির্বাচন ইচ্ছুক প্রার্থীরা।
দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশ না নেয়; তাহলে ওর্য়াডগুলোতে দলীয় পছন্দের প্রার্থী থাকবে না। ইতিমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে। প্রতিটি ওর্য়াডে প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকলে সবাইকেই জয়ের জন্য বেশ বেগ পেতে হবে বলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।
এদিকে বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী সূত্র অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন করবে না বিএনপি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিমধ্যে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
এছাড়া সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থীরাও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পোস্টার ছাপিয়ে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব তরুণ নেতারা নির্বাচন করতে চান তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ও খুলনা মহানগর যুবলীগের সাবেক সদস্য মশিউর রহমান সুমন । তিনি এবারের নির্বাচনে নগরীর ২১ নং ওয়ার্ডে থেকে নির্বাচন করতে চান। নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিন সেবককে বলেন “আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে এ ওয়ার্ডকে মাদক, ভূমিদস্যুতা ও চাঁদাবাজ মুক্ত একটি মডেল ওয়ার্ড গড়ে তুলবো । এছাড়াও তিনি বলেন ২১ নং ওয়ার্ডে হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের বাসিন্দার সংখ্যা অনেক, তাদের শতভাগ অধিকার ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন । তিনি আরো বলেন এই ওয়ার্ডটিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশের বসবাস৷ তাদের ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে পড়াশোনা, শিশুশ্রম বন্ধ, তাদের শারীরিক পুষ্টি উন্নয়নে কাজ করব । এলাকার পঃয়নিষ্কাষণ ও মশক নিধণ ও রাস্তার উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন।
৩০ নং ওর্য়াড থেকে নির্বাচন করতে চান ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শিহাব উদ্দিন, তিনি প্রতিদিন সেবককে বলেন “এলাকার যুবসমাজ এবার পরিবর্তন দেখতে চান যুবসমাজ আমার সাথে আছে । দীর্ঘদিন আমার ওয়ার্ডটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমার এই ওয়ার্ড তেমন উন্নয়ন হয়নি।”
তিনি যদি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তাহলে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দকৃত অর্থের বাইরে নিজ অর্থায়নে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, ওর্য়াডে শতভাগ সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করবেন।
১৪ নং ওর্য়াড থেকে নির্বাচন করতে চান ইয়াসির আরাফাত ইয়াসিন, তিনি বলেন তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তার ওয়ার্ডের সকল সমস্যার সমাধান করবেন । ওয়ার্ডের বসবাসরত সকল বাসিন্দার কাছে তিনি যাবেন তাদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য সকল কাজ তিনি করবেন। নাগরিক সকল সেবা কে তিনি ওয়ার্ডে বসবাসরত সকল বাসিন্দার দোরগোড়ায় পৌছে দিতে চান ।
নগরীর ২৫,২৭ ও ২৮ নং ওয়ার্ডে (সংরক্ষিত- ৯) আসনে মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নুপুর দাস প্রতিদিন সেবককে বলেন, একজন সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর দ্বারা যে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এলাকাবাসী পাবার কথা ছিল তার কোন সুবিধাই এলাকাবাসী পাইনি বরং ন্যূনতম নাগরিক সেবা গ্রহণের জন্য নানারকম সমস্যা সম্মুখীন হয়েছে এলাকাবাসী । একজন নারী রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এলাকার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে আমি সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হয়েছি । আমি যদি জয়লাভ করি তবে আমার এলাকার নারী উন্নয়ন হবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উল্লেখিত উন্নয়ন । তিনি আরো বলেন গরিবদের জন্য বিনামূল্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করে দেওয়া বাল্যবিবাহ বন্ধ করা,যেসকল নারীরা অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না তাদের সহায়তা করা সহ এলাকার সকল নারী উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা তিনি করবেন ।
তরুণরা এখন জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ করছে। বিষয়টিকে কেমন ভাবে দেখছেন সচেতন সমাজ এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার পিয়া বলেন, “এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার ও এটি একটি ইতিবাচক দিক। তরুণরা এখন দায়িত্ব নিতে চান, একজন তরুণ দায়িত্ব পেলেই অভিজ্ঞ হবেন”। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন “সমাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ ব্যক্তির প্রয়োজন । কিন্তু এটাও সত্য যে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য তরুণদের সুযোগ করে দিতে হবে।” তিনি তরুণদের এই ইচ্ছাশক্তিকে সম্মানের সাথে স্বাগত জানান ।
তরুণ প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রতিদিন সেবক কথা বলেছে একাধিক তরুণ ভোটারদের সাথে । তারা চান আধুনিক যুগে অবশ্যই একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কে আধুনিক হতে হবে । তাহলেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একটি ওয়ার্ড চলবে এবং মডেল ওয়ার্ড হিসেবে রূপান্তরিত হবে। পাশাপাশি তারা নতুনদেরকে স্বাগত জানায় ।
এনআই/এএপি/পিএসএন