খুলনায় যুবক নাঈম মোল্লা হাত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার টিকটকার নুসরাত আমিন সুমনা এবং তার মা নুর নাহার বেগমকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
রোববার বিকেল তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে টিকটকার নুসরাত আমিন সুমনা। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ২ এর বিচারক মো: আল আমিন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
শিপইয়ার্ড এলাকার একাধিক স্থানে ঘুরে জানা গেছে, নাঈম মোল্লা দীর্ঘ ১০ বছর খুলনা শিপইয়ার্ডে আউট সোর্সিং হিসেবে কর্মরত ছিল। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টিকটকার নুসরাত আমিন সুমনার সাথে পরিচয় হয়। সুমনার একাধিক যুবকের সাথে সম্পর্ক আছে। সে উঠতি বয়সের যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলত এবং টিকটক করে অর্থ উপার্জন করত। প্রয়োজন শেষ হলে ওইসব যুবকদের সাথে তার সম্পর্ক ছেদ করত। সুমনার বিয়ে হয়েছে এবং একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নাঈম মোল্লার সাথে। নাঈম মোল্লা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট না জেনে তার সাথে প্রেমে জাড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পরিনতি হয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
আরও জানা যায়, ফেসবুকে পরিচয় হলেও তাদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়। সুমনার বাড়িতে প্রায় যাতায়াত ছিল নাঈমের। তার বাসায় দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করত সে। এক সময়ে বিশেষ অন্তরঙ্গ মুহুর্তের একটি ভিডিও ধারণ করে নিহত ওই যুবক। যেটি টিকটকার সুমনা জানত না। গত কয়েকদিন সুমনা ও নাঈমের মধ্যে একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য হয়। আর এ কারণে নাঈমকে তার বাসায় এবং তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। আর এতে বাঁধ সাধে। তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করতো সুমনা। এরই ধারাবাহিকতায় অপর এক যুবকের সাথে সম্পর্ক হয় সুমনার। তাকে দিয়ে শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলে সুমনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই যুবককে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিপইয়ার্ড মেইন গেটের সামনে সুমনার ভাড়া বাড়িতে ডেকে নেয়া হয়। দুপুরে তারা সেখানে খাওয়া দাওয়া করে। কিভাবে তাকে শিক্ষা দেওয়া যায় তা বাস্তবায়নে দু’জনে পরিকল্পনা করতে থাকে। বিকাল ৪ টার পর শিপইয়ার্ডে কাজ শেষে নাঈম দুপুরের খাওয়া শেষ করে সুমনার ভাড়া করা বাড়ির আশপাশে ঘুরতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে নাঈম সুমনার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তার পর থেকে আর তাকে দেখা যায়নি।
অপর একটি সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সুমনা, নাঈম এবং উপস্থিত এক যুবকের মধ্যে ব্যাপক কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উপস্থিত ওই যুবক ঘরের মধ্যে থাকা একটি রড দিয়ে নাঈমের মাথার বাম পাশে আঘাত করে। ওই আঘাতে তার মৃত্যু হয়। ঘড়ির কাটা যখন রাত ২ টা ছুইছুই তখন উপস্থিত ওই যুবক এবং টিকটকার নুসরাত আমিন সুমনা নাঈমের মরদেহ শিপইয়ার্ড মেইন রোড সংলগ্ন মোশারফের বাড়ির সামনে হাত-পা এবং মুখ পলিথিন দিয়ে বেঁধে রাস্তায় ফেলে যায়। পুলিশ লাশের পরিচয় পাওযার জন্য সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সুমনার নতুন বন্ধুর ভয়ে এলাকার কেউ কোন কথা বলেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্ত এসআই আ. রহিম বলেন, শুক্রবার লাশ পাওয়ার পর একটি গোপন সূত্র জানায় সুমনার বাড়িতে মৃত যুবকের যাতায়াত ছিল। দুপুরে আমরা তাকে এবং তার মাকে হেফাজতে নেই। কিন্তু তারা হত্যাকান্ডের ব্যাপারে প্রথমে মুখ খোলেনি। ব্যাপক জিজ্ঞাবাদের এক পর্যায়ে নিহত যুবকের পরিচয় এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকার করে সুমনা। আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে রোববার তাদের দু’জনকে আদালতে আনা হলে সুমনা নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে।
এদিকে নিহত নাঈমের ভাবি রেখা খান বলেন, সে অপরাধী। দেশে আইনের শাসন আছে। তাকে তারা পুলিশে দিতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে আমর দেবরকে হত্যা করেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।