খুলনায় নবনির্মিত জেলা কারাগার জুলাই মাসে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এর প্রায় ৯৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ (PWD) কারা কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগিরই কারাগারটি হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক গোলাম মোস্তফা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে নির্মাণাধীন স্থান পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত বাকি কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।
PWD এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, জুন মাসের শেষ নাগাদ কারাগারটি হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। আগে এটি ২৫ মে হস্তান্তরের কথা ছিল, কিন্তু অসম্পূর্ণ নির্মাণের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, “আমরা জুনের শেষ সপ্তাহে কারাগারটি বুঝে পাওয়ার আশায় আছি। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ শেষ হলে বন্দিদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে।”
প্রকল্পটি ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। শুরুতে এর বাজেট ছিল ১৪৪ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সময়সীমা আটবার বাড়ানো হয় এবং দুটি সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি টাকা। প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘসূত্রিতা হতাশাজনক হলেও এখন প্রকল্প প্রায় সম্পূর্ণ।
পুরনো খুলনা কারাগারটি ১৯১২ সালে ভৈরব নদীর পাড়ে নির্মিত হয় এবং এটি ৬৭৮ জন বন্দির জন্য ডিজাইন করা হলেও বর্তমানে সেখানে ১,৪০০ এর বেশি বন্দি রয়েছে। পুরনো ভবনগুলোর নিরাপত্তা হুমকিতে থাকায় নতুন কারাগার নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয়।
নতুন কারাগারটি খুলনা সিটি বাইপাস (রূপসা ব্রিজ সড়ক) সংলগ্ন ৩০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে। এটি ৪,০০০ বন্দির ধারণক্ষমতার জন্য পরিকল্পিত হলেও বর্তমানে ২,০০০ জনের মতো ধারণের অবকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে। ভবিষ্যতে পৃথক প্রকল্পে বাড়তি ভবন নির্মাণের সুযোগ থাকছে।
এই প্রতিবেদক পরিদর্শনকালে দেখেন, পুরো কমপ্লেক্সটি যেন একটি আবাসিক এলাকার মতো—রঙিন ভবন, টাইলস বসানো হাঁটার পথ ও সুসজ্জিত উদ্যান রয়েছে।
কারাগারে বিচারাধীন ও দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক ইউনিট, কিশোর ও নারী বন্দিদের জন্য বিশেষ ব্যারাক, ৫০ শয্যার হাসপাতাল, কারা স্টাফদের সন্তানের জন্য স্কুল, লাইব্রেরি, ডাইনিং এরিয়া, সেলুন, লন্ড্রি এবং মহিলা বন্দিদের জন্য ডে-কেয়ারসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।
নারী বন্দিদের সন্তানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, প্রার্থনা কক্ষ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্থান রয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সে ৫২টি ভবন রয়েছে।
PWD এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, বড় অংশের নির্মাণ শেষ হয়েছে, এখন শেষ পর্যায়ের রঙের কাজসহ কিছু ফিনিশিং বাকি। প্রায় ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি ওয়াল, সোলার বিদ্যুৎ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পয়ঃনিষ্কাশনের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান জানান, নতুন কারাগারের জন্য ৬০০ জন জনবল চাওয়া হয়েছে, যেখানে বর্তমানে পুরনো জেলে প্রায় ২০০ জন কর্মরত। হস্তান্তর সম্পন্ন হলে ধাপে ধাপে নতুন কারাগার চালু হবে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, “পুরনো কারাগার অত্যন্ত জীর্ণ ও উপচে পড়া। অনেক দিন ধরেই আধুনিক কারাগারের দাবি ছিল খুলনাবাসীর। নতুন কারাগার প্রস্তুতের খবরে আমরা আনন্দিত।”