দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পয়ঃবর্জ্য শোধন কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে (স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) খুলনার মাথাভাঙ্গা ও ঠিকরাবন্দে। খুলনা ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শোধনাগার দুটি নির্মাণ হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন ৮ কোটি লিটার বর্জ্য পরিশোধন হবে। শোধনাগার দুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪৫৯ কোটি টাকা ।
ওয়াসা থেকে জানা গেছে, নগরীর ১৬ থেকে ৩১নং ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য এসব পরিশোধন কেন্দ্রে নেওয়া হবে। সেখানে পরিশোধনের পর বর্জ্য থেকে সার উৎপন্ন হবে। এজন্য নগরজুড়ে পাইপ লাইন ও ম্যানহোল স্থাপনের কাজ চলছে।
বর্তমানে নগরীর বাসাবাড়িতে উৎপন্ন পয়ঃবর্জ্য নিজস্ব সেফটিক ট্যাংকে জমা হয়। ট্যাংক ভর্তি হয়ে গেলে কেসিসির গাড়িতে করে বর্জ্য শোধন কেন্দ্রে ফেলা হয়। আবার কিছু বর্জ্য সরাসরি ফেলা হয় ড্রেনে। মানুবসৃষ্ট এসব পয়ঃবর্জ্য ড্রেন ও নদ-নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অন্যদিকে রোগব্যধিও বাড়ছে এতে করে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই ‘খুলনা পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন হয়।
প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এডিবি। সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করবে ৯২৯ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে্র মধ্যে এই প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান তিনটি প্যাকেজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পয়ঃবর্জ্য শোধন কেন্দ্র বা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ। নগরীর সীমান্তবর্তী মাথাভাঙ্গায় একটি এবং ঠিকরাবন্দে দ্বিতীয়টি নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাথাভাঙ্গায় খুলনা রিভারভিউ পার্কের পাশেই রূপসা নদীর তীরে ১২ একর জমিতে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার বর্জ্য পরিশোধন হবে। পরিশোধিত বর্জ্য কিছু অংশ সার হবে। বর্জ্যের পানি দ্বিতীয় দফা পরিশোধন করে রূপসা নদীতে ফেলা হবে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, একটি বাড়িতে উৎপন্ন বর্জ্য ও পানি বর্তমানে দুটি পাইপ লাইনের মাধ্যমে নির্গত হয়। এর মধ্যে টয়লেটে মল ও মূত্র একটি পাইপে সেফটি ট্যাংকে যায়। রান্না, গোসলসহ অন্য পানি আরেকটি পাইপে ড্রেনে চলে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর একটি বাড়ি বা ভবনের সব ধরনের বর্জ্য এবং পানি স্যুয়ারেজ পাইলাইনে চলে যাবে। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপিত পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে চাপ দিয়ে এসব পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নেওয়া হবে। বর্জ্যের সঙ্গে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় পাম্প স্টেশন বা ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পানি যেতে কোনো সমস্যা হবে না। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বর্তমানে সড়কের পাশে থাকা ড্রেনগুলোতে বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো পানি বা বর্জ্য প্রবাহিত হবে না। ফলে বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা দূর হবে।
খুলনা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক খান সেলিম আহমেদ বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন পাইপলাইন এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্ট জটিল ধরনের কাজ। বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটি নির্মাণ হচ্ছে। নগরীর ১৬টি ওয়ার্ডের ২৭ হাজার বাড়ির বর্জ্য এই দুটি কেন্দ্রে পরিশোধন হবে। এজন্য নগরীতে প্রয়োজনীয় পাইপলাইন ও ম্যানহোল স্থাপনের কাজ চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই শোধন কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে।
উল্লেখ্য, ঠিকারাবন্দের ২২ একর জমিতে নির্মাণাধীন দ্বিতীয় শোধন কেন্দ্রের প্রতিটিতে ৫ কোটি ২০ লাখ লিটার বর্জ্য শোধন হবে। এর কাজও ৪৫ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। দুটি শোধন কেন্দ্রের ফাকা জায়গায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেন্দ্র দুটি থেকে প্রতিদিন ১ দশমিক ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।