সম্প্রতি খোলাবাজারে রেকর্ড ১২০ টাকার উপরে ওঠে ডলারের দাম। লাগামহীন দাম বাড়তে থাকায় নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। দাম নিয়ন্ত্রণে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালানো হয় ডলার নিয়ে কারসাজি করায় বেশ কিছু মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিতসহ শোকজ করা হয়। এ ছাড়া ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে খোলাবাজারে ডলার বিক্রিতে লাভের সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব অভিযানের পরেও খোলাবাজারে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডলারের দাম। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল এলাকার খোলাবাজারের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডলার সংকট দেখা যায়। গ্রাহকরা প্রয়োজন অনুযায়ী ডলার কিনতে পারছেন না। কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে সীমিত ডলার থাকলেও প্রতি ডলার ১১৩-১১৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। ডলার বিক্রি করতে আসলে ১১১-১১২ টাকা পর্যন্ত ডলার কিনে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিল আদমজী কোর্টের তৃতীয় তলায় অবস্থিত একটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জানান, খোলাবাজারে এখন ডলার সরবরাহ কম।
তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চেয়েছিল মানি চেঞ্জারগুলো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এই মুহূর্তে কোনো ডলার সহায়তা দিতে পারবে না বলে জানায়। এই কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। অবৈধ মানি চেঞ্জারগুলো কারসাজি করে খোলাবাজারে ডলারের দাম অস্থিতিশীল করছে বলে অভিযোগ করছেন মানি চেঞ্জার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ. কে. এম. ইসমাইল হক। তিনি বলেন, অবৈধ চেঞ্জারগুলো চড়া দামে বিক্রি করে।
তাদের কোনো জবাবদিহি নাই। ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে না। তারা কারসাজি করছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কোনো মামলা দেয়া হয়নি। এ জন্য তারা ফের কারসাজি করছে। তাদের জন্য আমাদের ব্যবসা খারাপ হচ্ছে। আমরা সরকারের বেঁধে দেয়া রেটে ডলার বিক্রি করি। খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়েছি। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে ডলার কিনতে চেয়েছি। অনলাইনে ব্যাংক টু মানি এক্সচেঞ্জ ও মানি এক্সচেঞ্জ টু মানি এক্সচেঞ্জ ডলারের লেনদেন করার অনুমতি চেয়েছি। কিন্তু ব্যাংক অনুমতি দেয়নি। আমরা আবারো আলাপ করবো। এসব অনুমতি দেয়া হলে খোলাবাজারে ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ার পর থেকেই ডলারের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। খোলাবাজারে কারসাজি করে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হয়। যা গত আগস্টের মাঝামাঝি সময় গিয়ে ১২০-১২১ টাকায় ওঠে। দেশের ইতিহাসে এটাই ছিল ডলারের সর্বোচ্চ দর। এই রেকর্ড পরিমাণ দরেও তখন ডলারের সংকট পোহাতে হয়েছিল গ্রাহকদের। খোলাবাজারে কারসাজি রুখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থা মিলে অভিযান পরিচালনা করে। তখন ডলার নিয়ে কারসাজি করায় পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপা?শি ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়ে?ছে। শোকজের যথাযথ উত্তর দিতে পারলে এসব মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশে ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
তখন অভিযানে আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়ে এতদিন ব্যবসা করে আসছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক বলেন, ডলার কারসাজিতে শোকজ করা ৪২টি মানি চেঞ্জারের জবাবগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত মাসে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে খোলাবাজারে লাভের সীমাও বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো যে দরে নগদ ডলার বিক্রি করবে সেটির সঙ্গে সর্বোচ্চ দেড় টাকা যোগ করে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার বিক্রি করতে পারবে বলে মানি চেঞ্জার এসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করে জানানো হয়। তবে খোলাবাজারে এই নিয়ম মেনে ডলার বিক্রি হচ্ছে না। সম্প্রতি নগদ ডলার কেনাবেচায় মানি চেঞ্জারের থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে শাখায় শাখায় নগদ ডলার লেনদেন করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ডলার বেচাকেনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের ২০০টি এডি শাখা রয়েছে। সমপ্রতি ২৩টি ব্যাংক নতুন ৬৬৬ শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা (অনুমোদিত ডিলার বা এডি শাখা) লেনদেনের অনুমতি চেয়েছে। যেখানে ২৩৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। তবে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।
পিএসএন/এমআই