দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) টিকিয়ে রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। ছোট অপারেটরদের বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা এবং ডিডস আক্রমণের মতো সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান শুরু করেছে।
একইসঙ্গে নতুন টেলিকম লাইসেন্স নীতিমালায় ছোট আইএসপির কার্যপরিধি সম্প্রসারণ, লাইসেন্স ফি যৌক্তিককরণ এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সরকার নীতিগত সংস্কারের পথে এগোচ্ছে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এসব বিষয়ে জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিছু বড় আইএসপি বা গোষ্ঠী ছোট অপারেটরদের নেটওয়ার্কে নিয়মিতভাবে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়েল অব সার্ভিস (ডিডস) আক্রমণ চালাচ্ছে। এসব আক্রমণের লোড অনেক সময় ৫০০ থেকে ৭০০ গিগাবিট পর্যন্ত হয়, যা ক্ষুদ্র নেটওয়ার্কের পক্ষে সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এর ফলে ছোট আইএসপিগুলো দীর্ঘ সময় নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে তাদের গ্রাহক হারাচ্ছে- বাজার দখল করছে বড় কোম্পানিগুলো।
মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে আরও জানা গেছে, কিছু জাতীয় আইএসপি কোম্পানি নতুন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কিং ও লাইসেন্সিং নীতিমালার ভুল ব্যাখ্যা করে ছোট অপারেটরদের ভয় দেখাচ্ছে, এমনকি তাদের একীভূত করার (অ্যাকোয়ার) চেষ্টা করছে। এ প্রক্রিয়াকে সরকার ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, নতুন টেলিকম লাইসেন্স নীতিমালায় ছোট আইএসপিগুলোর কাজের ক্ষেত্র বরং বিস্তৃত করা হয়েছে। এখন তারা তাদের বর্তমান অপারেটিং এলাকা ছাড়াও পুরো জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। আমরা চাই, জেলা পর্যায়ের উদ্যোক্তারা আরও শক্ত অবস্থানে টিকে থাকুক।
তিনি জানান, সরকার পরিকল্পনা নিচ্ছে যাতে জেলা পর্যায়ের লাইসেন্স ফি আরও যুক্তিসংগত করা যায়। ন্যাশনাল আইএসপি পর্যায়ে লাইসেন্স ফি সামান্য বাড়িয়ে সেটির অংশ ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক লাইসেন্সের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
নীতিগত অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
সম্প্রতি ফাইবার টু দ্য সার্ভিস প্রোভাইডার মূল্যনীতি ও নেটওয়ার্ক লাইসেন্সিং নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আমরা বিটিআরসিকে সম্পূর্ণ সম্মান করি। তাই এফটিএসপি মূল্যনীতি নিয়ে এখনই কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করছি না। বিটিআরসি থেকে আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা পাওয়ার পর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অবস্থান চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি আশ্বাস দেন, খুব শিগগিরই এই খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে, বড় আইএসপি সিন্ডিকেট বা বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা রোধে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, আমরা আইএসপিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) হিসেবে বিবেচনা করি। তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বাজার থেকে ছোট অপারেটরদের সরিয়ে দেওয়ার যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দেওয়া হবে। ডিডস আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


