তেল মজুদের মতো ডলার নিয়েও খেলা শুরু করে দিয়েছে সরকারের সিন্ডিকেট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, চারদিকে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আর্থিক খাত পঙ্গু হয়ে গেছে। দেশ চালানোর মতো অর্থ ফুরিয়ে আসছে। ডলারের রেট প্রতিদিন বাড়ছে। দেশে খোলা মুদ্রাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম প্রথমবারের মতো শত টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন দুর্নীতি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী মাফিয়া চক্রে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব অভিযোগ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নাকি দেশের টাকা বিদেশে পাচারের তালিকার শীর্ষে। হঠাৎ করেই কেন এমন আজগুবি, উদ্ভট ও হাস্যকর অভব্য অভিযোগ করলেন? এর কারণটা হলো, ১২ মে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ঘরে বসে দেওয়া ভাষণে নিজেই স্বীকার করেন যে, আওয়ামী লীগের নেতারা কোটি-কোটি টাকা পাচার করেছে। তার দলে টাকা পাচারকারী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজসহ অপকর্মের সঙ্গে যুক্তদের প্রাধান্য চলছে। আর যারা এই পাচারকারী-অপকর্মকারী তাদেরকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া হবে না।
‘এই নিরেট সত্য মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়ায় নিজ দলের টাকা পাচারকারী মাফিয়াদের সাঁড়াশি আক্রমণে ভড়কে গিয়ে তার দু’দিন পর ১৫ মে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের নিজের গদি রক্ষা আর পিঠ বাঁচাতে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে নিতে চিরাচরিত অভ্যাসনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একেবারে ডাহা মিথ্যার রূপ কথা সাজিয়েছেন,’ বলেন রিজভী।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, দেশ-বিদেশের সকলেই জানে, এই নিশিরাতের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপি স্বজন-পরিজন-লুটপাট, টাকা পাচার, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাস, দুর্নীতি অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত।
বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী কিংবা তাদের নেতাদের কিংবা প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গত এক দশকে দেশ থেকে ১১ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করে দিয়েছে। সম্প্রতি ফরিদপুরে নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় তথা তার বেয়াইয়ের সহদর ভাই দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের দায়ে ধরা পড়ছে। এর আগে ফরিদপুর ছাত্রলীগের দুই নেতাও আরও দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ধরা পড়েছে।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের হাজার-হাজার কোটি টাকা পাচারকারী একেকজন আওয়ামী নেতার ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। আওয়ামী নেতাদের টাকা পাচারের কাহিনী সিন্দাবাদের কাহিনিকেও হার মানায়। জনগণের অর্থকে কিভাবে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠি লোপাট করেছে তার নতুন নতুন লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসছে।
‘এই সমস্ত অজানা লুটপাটের কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু করায় আওয়ামী সরকার এখন দিশেহারা। সেজন্যই আকষ্মিকভাবে জিয়া পরিবার ও বিএনপি’র বিরুদ্ধে বানোয়াট কাহিনী প্রচার করে নিজেদের চেহারাকে আড়াল করতে ব্যর্থ চেষ্টা করছেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা,’ যোগ করেন বিএনপির এ নেতা।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি এবং টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত এটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এবার ব্যাপকভাবে দুদক কেন তাদের দুর্নীতি এবং টাকা পাচারের তদন্ত শুরু করছে না, আর এ কারণেই আগামী দিনে দুর্নীতিবাজ আর টাকা পাচারকারীদের সহযোগী হিসেবে দুদককে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ আওয়ামী সরকার মৃত্যুঞ্জয়ী নয়, এদের পতন আসন্ন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।
পি এস/এন আই