করোনা মহামারিতে চাকরিচ্যুত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা সহায়তা দেয়। সরকার দেয় আরও ৩০০ কোটি টাকা।
দুই বছরে এ টাকার বিতরণ করা হয়েছে মাত্র আট কোটি ৯৬ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা। দুই বছর ধরে পড়ে আছে এক হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, এ টাকা বিতরণ করার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
করোনা মহামারিতে ঝুঁকিতে পড়ে তৈরি পোশাক শিল্প। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার শ্রমিক। যে শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে তাদের প্রত্যেকের চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিন মাস তিন হাজার করে মোট ৯ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সরকারও ৩০০ কোটি টাকায় দেয়। এ টাকা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকের সঠিক তথ্য না থাকার কারণে এ টাকা বিতরণ করা যায়নি।
এ বিষয়ে তহবিল পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক আসরিফ মাহমুদ জানান, তহিবল বিতরণের জন্য যথাসময়ে কাজ শুরু করা হলেও শ্রমিকের তথ্য সঠিক না হওয়ার কারণে বিতরণ করা যায়নি। এনআইডি কার্ড, সংশ্লিষ্ট কারখানার ও সেক্টর অ্যাসোসিয়েশন বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ এর তথ্যের ভিত্তিতে এ টাকা বিতরণ করা হয়। কারখানায় সংরক্ষিত এনআইডি ব্যবহার করে শ্রমিকের সহায়তার জন্য আবেদন করলে শ্রমিকের নামের সঙ্গে এনআইডি-এর নামে না মেলায় আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এ কারণে সময় মতো শ্রমিকদের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্রম অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে শুরু করে এখন পর্যন্ত তহবিল থেকে ৯ হাজার ৯৬৫ জন শ্রমিককে আট কোটি ৯৬ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। শুরুতে ৬০ হাজার শ্রমিকের আবেদন করে। এ আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাত্র ২৫০টি সঠিক বলে বিবেচিত হয়। বাকি ৫৯ হাজার ৭৫০টিই বাতিল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি বলেন, করোনার সময়ে যেসব শ্রমিক চাকরি হারিয়েছিল তারা পেয়েছে। আবার অনেকে চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। তারা আর ফিরে আসেনি। এ কারণে অনেক শ্রমিক প্রণোদনার টাকা পায়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সময় মতো তহবিল বিতরণ করতে না পারায় ইউরোপীয় ইইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে সরকার তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। শুরুতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, লেদার ও ট্রেনারি শ্রমিকের জন্য এ তহবিল ছিল। পরে জুট, শিপ ব্রেকিং, হিমায়িত চিংড়িসহ ছয়টি খাত বাড়িয়ে ১০টি খাত করা হয়। এখন এসব খাতের চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবে। এর পরিধি আরও বাড়বে। তহবিল বিতরণ চলতে থাকবে। নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা নেই। পর্যায়ক্রমে হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ অনান্য খাতের শ্রমিকদের যুক্ত করার চিন্তা ভাবনা করছে সরকার।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়। সমস্যা বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় পাটকল বন্ধ হয়েছে। এ সব শ্রমিকরা তহবিল থেকে সহায়তা পেতে পারে বলে মনে করেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
শুরুতে যে শ্রমিক ছাটাই হয়েছে তাদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ না করা, মালিক এবং তহবিল বিতরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের আগ্রহের অভাবে টাকা শ্রমিকের মাঝে বিতরণ করা যায়নি বলে মনে করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।
তিনি বলেন, শুরুতে আমরা চাকরিচ্যুত শ্রমিকের তালিকা করেছিলাম, অন্যান্য শ্রমিক সংগঠন তালিকা করেছিল। এ সব তালিকা যাচাইবাছাই করে শ্রমিকদের সহায়তা দিলে পেতো। কিন্তু সরকার যা করছে তা পুরো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ফলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা সময় মতো সহায়তা পায়নি, আগামীতে পাবে না। একটি সুবিধাভোগী মহল এ টাকাটা নিয়ে যাবে।
পিএসএন/এমঅাই