
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে পুলিশ আছে জনতার পাশে’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহের বর্ণাঢ্য আয়োজন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
রোববার (৮ জানুয়ারি) রাতে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এ সময় পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ হওয়া বীরশ্রেষ্ঠ ও ১৫ আগস্টে সপরিবারে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান চার নেতাকে স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা সেই বীর পুলিশ সদস্যের উত্তরসূরি যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামাজিক ও জননিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় অন্যান্য জাতীয় দায়িত্ব পালনে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, দুষ্কৃতিকারী ও আইন ভঙ্গকারীদের দমনে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং জীবন উৎসর্গকে এদেশের মানুষ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের আজকের এই গতিশীল অবস্থানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে সূচনালগ্নে দেশ ও মাতৃকার রক্ষার্থে বিজয় কেতন ওড়ানোর সুদৃঢ় প্রত্যয়ে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। পাশাপাশি সুনিপুণ রণকৌশল প্রণয়ন ও অস্ত্র সরবরাহ, সাধারণ জনগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশ পুলিশ এ দেশের ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জের মতো বিচরণ করছে।

পুলিশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বন্যা জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে যেকোনো সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসেবে প্রত্যয় ও আস্থার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, সাম্প্রতিক অতিমারি আমাদের সামষ্টিক সামাজিক জীবনে দুর্বৃত্ত আকার ধারণ করেছে। যখন আপনজনের লাশ থেকে নিজ পরিবারের সদস্যরা দূরে ছিল তখন আপনারা আপনাদের জীবনের পরোয়া না করে জনমানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিলেন। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যদ্রব্য। নিশ্চিত করেছেন ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা। আত্মনিয়োগ করেছেন করোনায় নিহত মানুষের সৎকারে। আপনাদের এ আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশকে জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কয়েক বছর আগে জনগণ অবৈধ অস্ত্রধারী ও বিভিন্ন তথাকথিত বাহিনী এবং দুষ্কৃতিকারীদের অত্যাচারে নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারত না। সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠায় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুদৃঢ়করণের অংশ হিসেবে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ বিচার বিভাগ ও বাংলাদেশ পুলিশ পারস্পরিক সহযোগিতার আদলে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতের বিভিন্ন নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনস রাজারবাগে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ উপস্থিতিতে একটি দৃষ্টিনন্দন প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ – ২০২৩ এর যে মনোমুগ্ধকর সূচনা হয়েছিলো প্রধান বিচারপতির উপস্থিতির মধ্য দিয়ে তা আজ সমাপ্ত হতে যাচ্ছে।
পুলিশপ্রধান বলেন, সকল নাগরিককে সেবা প্রদান, বসবাসের উপযোগী ও কর্মোপযোগী নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা বাংলাদেশ পুলিশের অভিলক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে প্রত্যয়ে রেখে প্রধানমন্ত্রী বিনির্মাণ করে চলেছেন দেশের ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সামাজিক শান্তি ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের জনগণকে প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা প্রদান করে চলেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

আইজিপি বলেন, আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখতে দেশের বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় সাধন আজ সময়ের দাবি। আইন লঙ্ঘনকারীকে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ ও বিচার বিভাগ পরস্পরের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ। বাংলাদেশে আইনের শাসন বজায় রাখতে ও দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ যে সকল নির্দেশনা প্রদান করে সে সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ পুলিশ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সাথে আনুষ্ঠানিক এ মতবিনিময় তদন্ত ও বিচারকার্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে মর্মে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিগণকে আইজিপি ধন্যবাদ জানান।
এর আগে পুলিশ সপ্তাহের ৬ষ্ঠ ও শেষ দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাথে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গত মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় দিনব্যাপী বিভিন্ন বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রোববার (৮ জানুয়ারি) শেষ হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩।