ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়নে ফিলিস্তিনকে সহযোগিতা করবে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার প্যারিসে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রেঁ। সেই বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়। তবে জাতিসংঘের নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে ওই অঞ্চলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামে দু’টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হবে। জাতিসংঘের এই তত্ত্বটি ‘টু-স্টেটস সলিউশন’ বা ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ নামে পরিচিত।
তবে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এই তত্ত্বের প্রয়োগ কখনও ঘটেনি। উপরন্তু বছরের পর বছর ধরে একটু একটু করে প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভূখণ্ড দখল করে গিয়েছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। টানা দুই বছর অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি হয় গাজায়।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আগে ২২ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজন করে ফ্রান্স এবং সৌদি আরব। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত সেই সম্মেলনেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, “ফ্রান্স এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পশ্চিম তীরে আসীন ফিলিস্তিনি সরকার) একটি যৌথ কমিটি গঠন করবে এবং সেই কমিটিই সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করবে। খসড়া সংবিধানে ফিলিস্তিনের সাংবিধানিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাংগঠনিক— অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত যতগুলো দিক থাকে, সব স্পর্শ করা হবে।”
“প্রেসিডেন্ট আব্বাস আমাকে একটি খসড়া সংবিধান দিয়েছেন। এখন যৌথ কমিটি সেই খসড়া যাচাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। যেসব অসম্পূর্ণতা আছে, সেগুলো পূর্ণ করা হবে।”
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা এবং নানাবিধ বৈশ্চিক চাপের পর গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নিতে একেবারেই প্রস্তুত নন। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার তিনি বলেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে ইসরায়েলের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হবে।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমরা সংলাপ ও শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ফিলিস্তিনকে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার, বহুত্ববাধ এবং ক্ষমতার পালাবদলের সরব উপস্থিতি থাকবে।”


