
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২৭ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৬০ পয়সা ধরে)। এই অর্থ ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল ইমার্জেন্সি রিকভারি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্প’ (বি-স্ট্রং) বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
ইআরডির সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরিনা শারমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকল্পটিতে মোট পাঁচটি খাতভিত্তিক কম্পোনেন্ট রয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে:
* পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড,
* কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন,
* দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর,
* স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি),
* আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)।
প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে দেশে সংঘটিত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, বাঁধ ইত্যাদির মেরামত এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সহায়তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
চুক্তি অনুযায়ী, এই ঋণ বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে নেওয়া হচ্ছে, যা পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। উত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক ০.৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১.২৫ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য। তবে অনুত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ ০.৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি নির্ধারিত থাকলেও, বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরসহ দীর্ঘদিন ধরে এই ফি থেকে অব্যাহতি দিয়ে আসছে।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে কাজ করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে মোট ৪৩.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার গভীরতা প্রকাশ করে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৪৭টি চলমান প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, যার পরিমাণ ১৩.১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব প্রকল্পের আওতায় রয়েছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, অবকাঠামো এবং জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।