যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উন্নয়ন মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যান দুদিনের সফরে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশে এসেছেন। তার এই সফর অভিবাসন, মানবিক সহায়তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে ঘিরে বলে জানিয়েছে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন।
ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, এই সফরে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের সহায়তা নিশ্চিত করবেন, যার মধ্যে নারী ও মেয়েরাও অন্তর্ভুক্ত। রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যানের এটি বাংলাদেশে প্রথম সফর।
এই সফরে তিনি জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের নতুন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের দূতাবাস বুধবার জানিয়েছে, এই সফরে দেশটির মন্ত্রী চ্যাপম্যান নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে (ভিএডব্লিউজি) সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে পরিচালিত কর্মসূচিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। পরিস্থিতি অনুকূল হলে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
অতি সম্প্রতি, বাংলাদেশে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের নতুন সাহায্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। এই সহায়তা ঘোষণার পরপরই সফরটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ সফরে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উন্নয়ন মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যান অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী সাক্ষাৎ করবেন।
এ ছাড়া, তিনি অনিয়মিত অভিবাসনসংক্রান্ত যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকেও যোগ দেবেন।
সফর প্রসঙ্গে জেনি চ্যাপম্যান বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সত্যিকারের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্বিত। বাংলাদেশি সম্প্রদায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমর্থন থেকে শুরু করে জলবায়ু সংকট এবং অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ উভয় দেশের জন্য বাস্তব এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘এই সফর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি আধুনিক, পারস্পরিকভাবে উপকারী উন্নয়ন অংশীদারত্বের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
উল্লেখ্য, চ্যাপম্যান সফরকালে বাংলাদেশসহ ১২টি এশীয় ও আফ্রিকান দেশ এবং অঞ্চলে জলবায়ু সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য নতুন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও করবেন। এর মধ্যে রয়েছে স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন তহবিলের মাধ্যমে দুর্বল এবং খাদ্য-নিরাপত্তাহীন পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জন্য স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা। এটি কয়েক হাজার পরিবারকে মৌসুমি বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা জলবায়ু-সহনশীল কৃষি কৌশলগুলোর মতো ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।
এছাড়া, সংঘাত ও নিপীড়নের কারণে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী পরিষেবা প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্য সেপ্টেম্বরে ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদি অবদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় দেশ। দেশটি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে ৪৪৭ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন তহবিলে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের উন্নয়ন করবে। বাংলাদেশকে ৪ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে, আরও ১১টি দেশ এবং অঞ্চলও তহবিল পাবে। দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, সাহেল, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া এবং উগান্ডা।


