ছুটির দিনে দেশের চার জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিভিন্ন সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নাটোরে বাসের ধাক্কায় বাবা-ছেলে-নাতিসহ তিনজনের প্রাণ ঝরেছে। এছাড়া গাইবান্ধায় বাসের ধাক্কায় নানি-নাতনি, ফরিদপুরে দুই বাইকের সংঘর্ষে দুই কিশোর এবং মুন্সীগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় এক চালক নিহত হয়েছেন। ঢাকা মেইলের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
নাটোর: বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জেলার লালপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দাদা-নাতিসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। সবাই ছিলেন বাইকের আরোহী।
নিহতরা হলেন- উপজেলার বিরোপাড়া গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে শহিদুল ইসলাম, শহিদুলের ছেলে সোহাগ এবং সোহাগেরর ছেলে পাঁচ বছর বয়সী শিশু ইভান।
দুর্ঘটনার তিনজনের প্রাণহানির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন লালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান।
natoreজানা গেছে, বিকেলে লালপুর থেকে বাইকে করে গোপালপুর যাচ্ছিলেন একই পরিবারের ওই তিনজন। ডেবরপাড়া নামক (পল্লীবিদ্যুৎ) স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস জিএম ট্রাভেলসের সঙ্গে মোটরসাইকেলটির সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই সোহাগ এবং ইভান মারা যায়। আহত হন শহিদুল ইসলাম। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পথে তারও মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর চালক বাসটি রেখে পালিয়ে যায়।
ফরিদপুর: দুপুরে সদরপুর উপজেলার আকটের চর ইউনিয়নের আমজেদ বেপারীর বাড়ির সামনে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই কিশোর নিহত হয়েছে।
নিহতরা হলো- সদরপুরের আকটের চর ইউনিয়নের সাড়েং গ্রামের তামিম বেপারী ও ডাঙ্গী গ্রামের রিমন শেখ। দুজনই কিশোর বয়সী। এর মধ্যে তামিম মোলায়েম ডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত গোলদার এই তথ্য জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে ওসি জানান, হিরা নামে এক কিশোরকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে সদরপুর সদরে যাচ্ছিল তামিম। অন্য একটি বাইকে সদরপুর থেকে মনিকোঠার দিকে যাচ্ছিল লিমন। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুজন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজনই আহত হন।
স্থানীয়রা লিমনকে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তামিমকে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। আহত হিরাকে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গাইবান্ধা: সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের তুলসিঘাট বাজারে ভাপা পিঠা খেতে এসে বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন নানি-নাতনি। তারা হলেন—জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ছোট বৌলেরপাড়া গ্রামের আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী সাবিনা বেগম (৪৫) ও তার নাতনি টিয়া মনি (৫)।
স্থানীয়রা জানান, নিহত ছাবিনা স্থানীয় হোটেলে শ্রমিকের কাজ করতেন। সকালে নাতনির সঙ্গে তুলসিঘাটে আসে টিয়া মনি। এসময় ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য সড়কের এপার থেকে ওপারে যাচ্ছিল শিশুটি। তাকে বাঁচাতে পেছনে দৌঁড় দেন নানি সাবিনা। এসময় ঢাকা থেকে গাইবান্ধাগামী আল রিয়াদ পরিবহনের একটি বাস দুজনকে চাপা দিয়ে চলে গেলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
গাইবান্ধা সদর থানার উপরিদর্শক (এসআই) মাইদুল ইসলাম দুর্ঘটনায় দুজনের প্রাণহানির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ: ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারানো মালবাহী একটি ট্রাক অন্য একটি রডবোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দিলে একজন নিহত হন। তার নাম আলীম সরদার। ৩৩ বছর বয়সী আলীম মালবাহী ট্রাকটির চালক ছিলেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। এ ঘটনায় তার সহকারী আহত হয়েছেন।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রিবেন বলেন, ভোরে মালবোঝাই একটি ট্রাক মাওয়ার দিকে যাওয়ার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে মাওয়ামুখী রডবোঝাই একটি ট্রাককে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকের চালক আলীম ও তার সহকারী রাজু আহত হয়। দুজনকে উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে আলীমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে তার লাশ হাইওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
