বিশ্বের শীর্ষ যানজটের শহরগুলোর একটি রাজধানী ঢাকা। প্রতিদিনই যানজটের কবলে পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে নগরের কর্মজীবী মানুষের। এই যানজটের অন্যতম কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত যানবাহন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার নামেমাত্র দুই-একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশির ভাগের নেই কোনো নিজস্ব পরিবহন। তাই তারা ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা রিকশাসহ অন্য যেকোনো পরিবহনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। এতে একদিকে যেমন জ্বালানির অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে রাজধানীতে যানজট তৈরি হচ্ছে। ঢাকার এই যানজট সমস্যা নিরসনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সমন্বয়ে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবনা তৈরি করে জমা দেবে। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে এক সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার কমানো এবং স্কুল-কলেজের পরিবহনব্যবস্থা চালুর বিষয়ে স্থায়ী সুপারিশ প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এই কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চবিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের প্রতিনিধি, একজন নগর বিশেষজ্ঞ ও একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞকে সদস্য করা হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করে থাকে। এতে করে একদিকে রাস্তায় যানজট বাড়ছে অন্যদিকে জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে। জ্বালানি সাশ্রয় ও কৃচ্ছতা সাধনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের পরিবহনে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার যৌক্তিকীকরণ, প্রয়েজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা এবং করণীয় নির্ধারণে অনুষ্ঠিত সভায় সেই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, নগর পরিবহনের বিষয়ে বেস্ট প্র্যাকটিস পর্যালোচনা; বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যানবাহন ব্যবহারের বিষয়ে পর্যালোচনা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবহনব্যবস্থার ক্ষেত্রে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের উৎস সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং সার্বিক বিষয়ে বিবেচনা করে প্রতিবেদন প্রদান।
এদিকে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে স্কুলে আসা যাবে না। স্কুলে যাতায়াতের জন্য ঢাকা উত্তর সিটির ব্যবস্থাপনায় স্কুলবাস চালু করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুলবাস সেবা চালু হবে। স্কুলবাস চালুর পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ‘স্কুলবাস সার্ভিস প্রবর্তনসংক্রান্ত প্রাথমিক কর্মকৌশল নির্ধারণ বিষয়ক’ শীর্ষক একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন এলাকার চিটাগং গ্রামার স্কুল, স্কলাসটিকা স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুল এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালের প্রধান ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।