আন্তর্জাতিক ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই সাধারণত ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু আজ আধঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কোনো কোচই সম্মেলনকক্ষে আসেননি। কারণ, ২২ বছর পর বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়েছে এমন ঐতিহাসিক জয়ের উৎসবে দল একটু বেশি সময় নিয়েছে।
পরাজিত দল ভারতের কোচ খালিদ জামিল প্রথমে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। তিন-চারটি প্রশ্নোত্তর শেষ হতেই বাফুফের মিডিয়া এক্সিকিউটিভ খালিদ মাহমুদ নওমী ঘোষণা দিলেন এবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন হামজা।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো হলে চাঞ্চল্য ফিরে এল। হাসিমুখে প্রথমবারের মতো ম্যাচ-পরবর্তী সম্মেলনে এলেন হামজা। তিনি শুরুতেই দলের সবার ত্যাগ ও ঐক্যের কথা তুলে ধরে বললেন, আমি তো ক্যাম্পে যোগ দিয়েছি একেবারে শেষে। কোচ, কোচিং স্টাফ আর খেলোয়াড়রা প্রায় ২৩ দিন ধরে এখানে আছে ৫০০ ঘণ্টারও বেশি সময়। পরিবার থেকে দূরে, হোটেলে থেকে দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে সবাই। আলহামদুলিল্লাহ, আজ তার ফল মিলেছে।
ইংল্যান্ডের শীর্ষ ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলেন হামজা, যাদের হয়ে তিনি জিতেছেন এফএ কাপ। আজ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জয় যা ২২ বছর পর পাওয়া তার চেয়ে বেশি আনন্দের কি না জানতে চাইলে তিনি বললেন, ভিন্ন কারণে হ্যাঁ। আমরা আজ ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা সম্ভব নয়। তাই অবশ্যই এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যের মধ্যে থাকবে।
বাংলাদেশের জার্সিতে হামজার অভিষেক হয়েছিল ২৫ মার্চ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে চার ম্যাচ পরই বাংলাদেশের টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তাই আজকের জয়ের পর খানিকটা আক্ষেপও শোনা গেল তার কণ্ঠে, হ্যাঁ, কষ্ট লাগে। কিন্তু এটিও এক ধরনের ফাইনাল ছিল ২৩ বছরের অপেক্ষার পর এমন বড় ম্যাচ জেতা। আজ সেটাই হয়েছে। আমরা জানতাম পারফরম্যান্স হচ্ছে, এবার দরকার ফল। আজ হয়তো পারফরম্যান্স পুরোপুরি হয়নি, কিন্তু ফল এসেছে। এখন মার্চে নতুন করে তৈরি হবো, পারফরম্যান্স আর ফল মিলিয়ে আরও শক্তিশালী দল হয়ে ফিরব।
ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা ও যুব দলে খেলা হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন থেকে। ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর স্বপ্নপূরণের প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই। মানুষের একাধিক স্বপ্ন থাকতে পারে। এটি তার একটি। ইনশাল্লাহ, খুব তাড়াতাড়ি আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টেও কোয়ালিফাই করব। আমরা প্রমাণ করেছি আমরা সক্ষম। শুধু সময় আর ধৈর্য দরকার।
দলের তরুণ দুই ফুটবলার জায়ান ও মিতুলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের দলে বহু কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। পূর্ণ স্টেডিয়ামের বিশাল চাপেও জায়ান, মিঠু সবাই দারুণ খেলেছে। মিতুল তো শেষ দিকে কয়েকটি বড় বল ধরে ম্যাচ বাঁচিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ শেষ কয়েকটি ম্যাচে ইনজুরি টাইমে গোল হজম করে পয়েন্ট হারিয়েছে। আজও সেই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ৩২ মিনিটে দারুণ এক হেড ক্লিয়ার করে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন হামজা মুহূর্তটিতে যেন গোলরক্ষকের ভূমিকায়ও দেখা গেল তাকে। এ নিয়ে তিনি বললেন, আপনি আপনার ভাগ্য নিজেই তৈরি করেন। আর আল্লাহর রহমতে আমরা নিরাপদেই ছিলাম, তাই জিতেছি। শেষ চার ম্যাচ ছিল খুব কঠিন। আমরা ড্রেসিংরুমে বলেছিলাম কাল যেন সবাই একসঙ্গে উদযাপন করতে পারি। কোচ ও দলের যে ত্যাগ পরিবার থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকা তারই প্রতিদান আজ পেয়েছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কারণ তাদের জন্যই আজ এমন উদযাপন সম্ভব হয়েছে।


