ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উদ্যোগে ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ এর সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ভূমিকম্পে সরকারি ভবনগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময় দেশের সকল ফায়ার স্টেশনকে সবার আগে ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি বা মেরামত করার আহ্বান জানানো হয়।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় বলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় সংস্থাটি। সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী, স্থপতি, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারটি উদ্বোধন করেন স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল এর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। এরপর বিষয়ভিত্তিক কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এ সময় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল সেমিনার সঞ্চালনায় বলেন, ‘এই প্যানেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, তথ্যভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি। ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান সক্ষমতা এবং ভূমিকম্প মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে দেশে চলমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা এবং ভূমিকম্প-ঝুঁকি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি উন্নীতকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য রাখার আহ্বান জানাই।’
সেমিনারে উপস্থিত বিশেষজ্ঞগণ এশিয়াসহ অন্য উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ও জনবলের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করেন। গ্যাপ এরিয়া ও এলাকা ভিত্তিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বিদ্যমান সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। ওয়াসার সকল পাম্প স্টেশনে ফায়ার সার্ভিসের ব্যবহারের জন্য ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করা হয়। ভূমিকম্পে সরকারি অফিসগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে দেশের সকল ফায়ার স্টেশনকে সবার আগে ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি বা মেরামত করার আহ্বান জানানো হয়। শহর কেন্দ্রিক ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে জায়গা পাওয়া না গেলে বিভিন্ন সরকারি ভবনের নিচের ২ তলা ফায়ার স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও, সেমিনারে ভলান্টিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের নিয়মিত রিফ্রেশার কোর্স করানো, সকল সেবা সংস্থাগুলোকে নিয়ে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয় বিষয়ের ওপর মক এক্সারসাইজ করা, ফায়ার একাডেমি নির্মাণ, প্রচার-প্রচারণায় মিডিয়াকে আরও অধিক মাত্রায় সংশ্লিষ্ট করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগের বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি মূল্যায়ন পরীক্ষায় সহশিক্ষা কর্মসূচি হিসেবে নম্বর যুক্ত করা, আবাসিক এলাকা হতে জরুরি ভিত্তিতে ক্যামিকাল গোডাউনসমূহ সরানো ও বিভিন্ন পর্যায়ে মহড়া ও প্রশিক্ষণ চলমান রাখার পরামর্শ প্রদান করা হয়।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মাকসুদ হেলালী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মো. জিল্লুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ (অব.), সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান, একুশে টিভির নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মেহেদী আনসারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজৈব এবং বিশ্লেষণাত্মক রসায়ন বিভাগের ড. আব্দুস সালাম, মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ (অব.), মোছা. ফুয়ারা খাতুন, মো. আব্দুল হালিম, স্থপতি ইশতিয়াক জহির, সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব প্রকৌশলী জাকির উদ্দিন আহম্মেদ, ইসাবের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. মঞ্জুর আলম সহ আরও অনেকে।
এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালকগণসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সকল বিভাগীয় উপপরিচালক ও জেলা কর্মকর্তাগণ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
সভায় দেশের সামগ্রিক জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ ভবিষ্যতে নিয়মিতভাবে পরামর্শ, গবেষণা এবং নীতিমালা প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে সকলে একমত পোষণ করেন।

