রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় বিএনপি সমাবেশ করতে পারেনি। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে পল্লবীর ৩টি স্থানের কোনো একটিতে সমাবেশ করতে পুলিশের কাছে অনুমতি চায় স্থানীয় বিএনপি।
বেলা ৩টায় সমাবেশ করতে অনুমতি চাওয়া হলেও অনুমতি দেয়া হয় ওইদিন বেলা ১টায়। অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপি কর্মীরা মিরপুর ৬ নম্বর এলাকায় সমাবেশের জন্য অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করছিলেন। বেলা ২টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মঞ্চ তৈরি করতে বাধা দেন ও সেখানে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। পরে বিএনপি কর্র্মীরাও পাল্টা ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। বিএনপি কর্মীরা ইট পাটকেল ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও দলীয় ৩ কর্মী নিহতের প্রতিবাদে পল্লবী জোন বিএনপি সমাবেশের আয়োজন করে। এর আগে মিরপুর-১২ নম্বরের দুটি স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি পায়নি দলটি। এদিকে সমাবেশ করতে না পেরে সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদে মিরপুর-৬ নম্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতাদের দাবি, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিরপুরে ৩টি স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুপুর ১টার দিকে মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারের সামনে মঞ্চ তৈরির অনুমতি দেয়া হয়। অনুমতি পাওয়ার পর মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চারদিক থেকে হামলা শুরু করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেখানে পুলিশ থাকলেও তারা আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সরজমিন দেখা যায়, বিএনপি’র সমাবেশ ঘিরে মিরপুর ৬ নম্বর ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটাসহ মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছে। বিএনপি’র সমাবেশের আশপাশের গলির প্রবেশ পথে তারা অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির সমাবেশের জন্য অস্থায়ী মঞ্চ তৈরিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এ ঘটনায় সড়কে দুই ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে ধীরে-ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, দুপুর ১টার সময় সমাবেশ করার জন্য ডিসি সাহেব আমাদের অনুমতি দেন। অনুমতি পাওয়ার পর আমাদের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে মাইক ও অস্থায়ী স্টেজ বানানোর সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে আওয়ামী লীগের হয়ে পুলিশ আমাদের লোকদের উপর হামলা চালায়। তিনি বলেন, পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীরা যেদিক থেকে আসছে, সেদিকেই টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এতে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমরা ডিসিকে আগেই বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো। ‘কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আমান বলেন, আমরা যে কর্মসূচি শুরু করেছি। এটা চলবে। আজকেও বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি চলছে। যেকোনো বাধা আমরা প্রতিহত করবো। বিএনপি’র অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের মিরপুর জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি যে অভিযোগ করছে তা সত্য নয়। পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে দায়িত্ব পালন করে না। ঘটনার ভিডিও ও ছবির বিষয় উল্লেখ করে বক্তব্য জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন স্থানীয় ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পিএসএন/এমআই