গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা দেশটির রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা নেতাদের ডেকে পাঠান। এই কর্মকর্তাদের ওই রাজ্যের দায়িত্ব দিয়েছে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা জান্তা সরকার। তারা মায়ু নদীর তীরে বুথিডাং শহরে বৈঠক করেন। সেনা কর্মকর্তারা স্পষ্ট ভাষায় রোহিঙ্গা নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাদের ওই এলাকায় সক্রিয় আরাকান আর্মির সঙ্গে সবধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার নিশ্চিতের জন্য লড়াই করছে বলে দাবি করে থাকে।
বুথিডাং-এর রোহিঙ্গা জনপদের এক নেতা আল-জাজিরাকে জানান, আমরা এখন সবাই আরাকান আর্মির প্রশাসনে অংশ নিচ্ছি। কারণ তারা সমতা ও আইন নিশ্চিত করছে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীর ওই নির্দেশনা অমান্য করেই চলেছে। গত নভেম্বরে যেসব রোহিঙ্গারা রাখাইন ত্যাগের চেষ্টা করেছে তাদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুথিডাং এর এক ৪৭ বছর বয়স্ক রোহিঙ্গা বলেন, বর্তমানে আমাদের শহরটি শান্ত আছে। তবে যে কোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এ নিয়ে আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি।
অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। কেউ এই আইন না মানলে তাকে ২ বছর কারাদ- দেয়া হয় সেখানে। গত নভেম্বরে মিয়ানমার নৌবাহিনী রোহিঙ্গাদের একটি নৌকা আটক করে। এতে করে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সেখান থেকে ৩৩ শিশুসহ ২ শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিয়ানমারের সবথেকে বড় শহর ইয়াংগুন থেকে ওই মাসেই আরও ৫৫ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। সামরিক বাহিনী এসে এই আইন আরও কঠিন করছে। গ্রেপ্তার হওয়া একজনকে দুই বছরের জায়গায় ৫ বছরের সাজা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পূর্বে মিয়ানমারের সরকার প্রধান ছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুকি। তার সময়েও তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। রোহিঙ্গা নির্যাতনের নিন্দা জানাতে তার উপরে আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্বেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তিনি সামরিক বাহিনীকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে যখন তার সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসে তখন থেকে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
পিএস/এনআই