
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা বহু শাসন দেখেছি, কিন্তু সেগুলো শাসন নয়, ছিল নিছক শোষণ। আমরা এমন এক শাসক চাই, যিনি সৎ হবেন এবং কোরআনের নীতিতে দেশ পরিচালনা করবেন।”
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা বিল্লালিয়া আলিম মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ আয়োজনটি ছিল দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে।
জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহণের সময় দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রসঙ্গ টেনে আমিরে জামায়াত বলেন, “সেদিনই হয়তো বিদায় নিয়ে ফেলতাম, কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত দ্বীনের পথে লড়াই করে যেতে চাই। আমার চাওয়া, শহীদ হয়ে রক্তমাখা চাদর গায়ে দিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হই এবং বলি—‘ইয়া মাবুদ, বাংলাদেশকে তুমি কোরআনের শাসন দাও।’”
এর আগে তিনি দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও শোকাহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে খুলনায় আসেন।
বক্তব্যে ডা. শফিক বলেন, “মাওলানা আবু সাঈদ দ্বীনের আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। চব্বিশের আন্দোলনেও আরেক আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। দ্বীনের বিজয়ের জন্য যদি আরও আবু সাঈদের প্রয়োজন হয়, তবে হে আল্লাহ, তুমি কবুল করে নাও।”
তিনি আরও বলেন, “জালিম শাসনের সময় যেসব নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে আমাদের দুইজন আমিরও রয়েছেন—সবারই শাহাদাত কবুল করো হে প্রভু।”
সামরিক প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “গতকাল এক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ইন্তেকাল করেছেন। চিকিৎসকদের মতে, আরও ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যারা হাসপাতালে রয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ করে তুলে আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দেন।”
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন দাকোপ উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আকতার হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি মাওলানা মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—
- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক
- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ
- অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম
- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন
- খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান
- বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম
- ছাত্রশিবির খুলনা মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন
- জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আমির, সেক্রেটারি এবং শূরা সদস্যরা।
সভায় জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন এবং এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় সমাবেশে যোগদানের পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গা চৌরাস্তা মোড়ে গত ১৯ জুলাই রাত পৌনে তিনটার দিকে একটি দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ (৫২) নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন জামায়াত কর্মী মো. আনিসুর রহমান ও মো. ইকবাল হোসেন। চিকিৎসা শেষে তারা বর্তমানে চালনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন এবং তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
পথসভা শেষে দুপুরে ডা. শফিকুর রহমান চালনা হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারযোগে পাবনার ঈশ্বরদীর উদ্দেশে রওনা হন, যেখানে শহীদ মোস্তাফিজুর রহমানের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।