ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের ১৫০০ কোটি টাকার মালিক! নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এই প্রকৌশলীর ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়ে এমন দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।
বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় দেওয়া ওই পোস্টে তিনি আরও দাবি করেছেন, নামে-বেনামে অন্তত ৬০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি গড়েছেন ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের। তাকে পতিত আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে সারজিসের প্রশ্ন, ‘এসব ডাকাতদের চেয়ারে বসিয়ে রেখে কিভাবে সংস্কার সম্ভব?’
পোস্টের শুরুতে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকেরের পরিচয় প্রকাশ করেছেন সারজিস আলম। এরপর তুলে ধরেছেন তার আমলনামা।
এরপরই সারজিসের দাবি, ‘খাইরুল বাকেরের নামে-বেনামে রয়েছে অন্তত ৬০০ শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি! স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, খাইরুল বাকের আনুমানিক ১৫০০ শত কোটি টাকার মালিক। নিকট আত্মীয় সিন্ডিকেট করে ৫ ভাই, ২ ছেলে ও স্ত্রী জেবুন নাহারের নামে ঢাকা এবং নরসিংদীসহ রয়েছে অন্তত ১৩টা বাড়ি ও ৬০০ শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ!’
এনসিপি নেতার আরও দাবি, ‘৫ আগস্টের পূর্বে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে একাধিক পোস্ট ও কমেন্ট করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত ও প্রতিহত করার চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি এই খাইরুল বাকের।’
তিনি লিখেছেন, ‘খাইরুল বাকের ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে। তারা ৬ ভাই। তার বাবা মিন্নত আলী ছিলেন নৌকার মাঝি, তার বাবা খেয়া পারাপারসহ কুলির কাজও করেছেন। দিন এনে দিন খাওয়া এই খাইরুল বাকের ২০০১ সালে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হিসাবে যোগদান করার পর থেকে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পায়। তা পর থেকেই তার স্ত্রী ও পাঁচ ভাইদের সম্পত্তি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি হতে থাকে।’
সারজিস লিখেছেন, ‘খাইরুল বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৫ পার্সেন্ট কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দিতেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে খাইরুল বাকের ছিলেন নরসিংদী বেলাবো- মনোহরদী উপজেলার আওয়ামী লীগের অর্থ দাতা। স্বৈরাচার সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সাথে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্বাচনি প্রচারণায় খাইরুল বাকের অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন বলেও অভিযোগ উঠে। খাইরুল বাকের বেলাবো ও মনোহরদী উপজেলার আওয়ামী লীগের অর্থ দাতা হিসেবেও বেশ পরিচিত।’
তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রজীবনে খাইরুল বাকের চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) শহীদ তারেক হুদা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে (চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।’
সবশেষে সারজিসের প্রশ্ন, ‘এই আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ৫ আগস্টের পরেও রয়েছে স্বপদে বহাল। এখন আবার ভোল পাল্টে অন্য দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে পদোন্নতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার ধান্দা করছে! এসব ডাকাতদের চেয়ারে বসিয়ে রেখে কীভাবে সংস্কার সম্ভব?’
এর আগে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দেওয়া অন্য একটি পোস্টে বিএনপির জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের যেসব নেতাকর্মী চাঁদাবাজি থেকে শুরু বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত, তাদেরকে সতর্ক করেন এই জুলাই বিপ্লবী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যের ফটোকার্ড পোস্ট করে সারজিস লেখেন, ‘বিএনপির যে সকল নেতাকর্মী জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এখন চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত, আপনারা এই কেন্দ্রীয় নির্দেশনাগুলো ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন।’
এরপরই জুলাই বিপ্লবীর সতর্কবার্তা, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে চাঁদাবাজি, লুটপাট করে অনেক বছর পার পেয়ে গিয়েছিল; আপনাদের (বিএনপি নেতাকর্মী) সেই সুযোগ নেই। ছবিসহ অপকর্মের লিস্ট জনগণই জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।