ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে লেগেছে ১৭ ঘণ্টা, ফিরতে লেগেছে ১৫ ঘণ্টা। কেউ কেউ ২০ ঘণ্টাও জ্যামে আটকে থেকেছেন। যমুনা সেতুর টোল প্লাজা, অসমাপ্ত মহাসড়ক ও অকার্যকর রেললাইন—সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের যাত্রা যেন এক অব্যবস্থাপনার করুণ দলিল। আর এই নাজুক পরিস্থিতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তীব্র জনভোগান্তির বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন।
শনিবার (১৪ জুন) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ঢাকা থেকে দেশের এক প্রান্তে যেতে যদি ১৫-১৭ ঘণ্টা লাগে, তাহলে ‘উন্নয়নের গল্প’ খুবই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘শুধু সংকীর্ণ টোল প্লাজার কারণে যমুনা সেতুর পূর্বে ২০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে উত্তরবঙ্গগামী মানুষ। অথচ, কারো টনক নড়ে না। ৬-৭ বছর আগেই টোলের অর্থ উঠে যাওয়ার পরও এখনো টোল আদায়ের জন্য এত সংকুচিত ব্যবস্থাপনা রাখা কেন?’
পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, ‘এক দশক ধরে রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চললেও আজও তা শেষ হয়নি। গোবিন্দগঞ্জ এবং পলাশবাড়িতে রাস্তার অর্ধেক কাজ পড়ে থাকায় ঈদের সময়ে কয়েক ঘণ্টা জ্যামে থাকতে হয়েছে অনেককে।’
‘ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কও এখনো চার লেনে উন্নীত হয়নি, যা জনসাধারণের চলাচলে চরম ভোগান্তি তৈরি করছে। এই ভোগান্তি কেবল ভ্রমণের নয়, এটি এক রকম বৈষম্য। কেন্দ্র থেকে উত্তরাঞ্চলের প্রতি বরাবরই একটা অবহেলা কাজ করেছে।’
সারজিস আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘ঢাকা থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় যেতে এখনো ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ রেললাইন বগুড়া-রংপুর হয়ে গেলে এ সময় হতো অনেক কম। কিন্তু এখন যেতে হয় রাজশাহী-নওগাঁ-নাটোর হয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার ঘুরে।’
তিনি মনে করেন, রেলপথে এই অকার্যকর সংযোগই প্রমাণ করে যে, উত্তরাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি কখনোই সরকারের মূল অগ্রাধিকার হয়নি।
সমাধানের পথ প্রসঙ্গে সারজিস লেখেন, ‘যমুনা সেতুর টোল প্লাজা বাড়িয়ে তিনগুণ করা হোক, কিংবা টোল আদায় পুরোপুরি বন্ধ করা হোক—মানুষকে এই কৃত্রিম জ্যাম থেকে মুক্তি দিতে হবে। এখন আর দয়া নয়, এটি জনগণের ন্যায্য অধিকার।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সারজিস আলম লেখেন, ‘উত্তরের জনপদগুলো থেকে আওয়ামী লীগ শুধু শোষণ করেছে, দেওয়ার বেলায় ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে উত্তরাঞ্চলের সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরগুলোর সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে বা চার লেনের মহাসড়ক নিশ্চিত করতে হবে। আন্তঃবিভাগীয় রেললাইনে আধুনিক সংযোগ ও মানসম্মত বগি নিশ্চিত করতে হবে। এই অবহেলার প্রতিকার না হলে উত্তরের জনগণ কাউকে আর ছেড়ে কথা বলবে না।’
স্ট্যাটাসের শেষাংশে সারজিস আলম আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘উত্তরবঙ্গের গণমানুষ, আপনারা আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তুলে ধরুন। এই সমস্যা সমাধান হতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার। যারা জনগণের জন্য কাজ করবে, তাদেরকেই ভোট দিন। যারা করবে না, তারা যে দলেরই হোক না কেন—তাদের বর্জন করুন।’