আমরা যে ছায়াপথে বসবাস করি সেই মিল্কিওয়ের কেন্দ্রস্থলেই রয়েছে দৈত্যাকার এক কৃষ্ণগহ্বর (ব্ল্যাক হোল)। এই ছায়াপথের কেন্দ্র থাকা রহস্যময় ওই কৃষ্ণগহ্বরের আলোকচিত্র প্রথমবারের মতো ধারণ করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ’ প্রজেক্টে এই কৃষ্ণগহ্বরের ছবি ধরা পড়েছে। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্যাজিটেরিয়াস-এ’।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) ছবিটি প্রকাশ করে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারকে যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন। এই গবেষণাটি ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস’ নামে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, সব কয়টি সৌরজগতে এমনকি আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রেও এমন কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না পদার্থ ও আলো। এমন এক অস্তিত্বের ছবিকে ধরা নিঃসন্দেহে একটি বড় বিষয় ছিল। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ কোলাবোরেশনের তরফে এই ছবি তুলে ধরা হয়। যা গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে।
ছবিতে দেখা যায় একটি কেন্দ্রীয় অন্ধকার অঞ্চল, যেখানে গহ্বরটি অবস্থিত। এটি প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় ত্বরান্বিত শক্তিতে সুপার-হিটেড গ্যাস থেকে আসা আলোর মাধ্যমে প্রদক্ষিণ করে। ভারসাম্য রক্ষার্থে বলয়টির আকার আমাদের নক্ষত্রের (সূর্যের) চারপাশে বুধের কক্ষপথের আকারের মতো। এটি প্রায় ৬০ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৪০ মিলিয়ন মাইল জুড়ে বিস্তৃত।
সৌভাগ্যবশত এই দৈত্যাকার বস্তুটি আমাদের সৌরজগৎ থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করায় এর থেকে কোনো রকমের বিপদ আসার সম্ভাবনা নেই।

এর আগে ২০১৯ সালে অন্য একটি নক্ষত্রপুঞ্জের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু যে নক্ষত্রপুঞ্জে নিজেদের বাস তার কেন্দ্রে থাকা এই ব্ল্যাক হোলের (কৃষ্ণগহ্বরের) ছবি মেলেনি। তবে ছায়াপথের ওই কৃষ্ণগহ্বরটিও কাছে নয়। পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ২৭ হাজার আলোকবর্ষ। অর্থাৎ আলোর গতিতে ছুটলেও পৃথিবী থেকে ওই গহ্বরের কাছে পৌঁছাতে ২৭ হাজার বছর লাগবে।
এর আগেও বহুবার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের আলোকচিত্র ধারণের চেষ্টা করেছেন। তবে আলোর গতিবিধি ও কৃষ্ণগহ্বরের বৈশিষ্ট্য কখনোই একাজে সহায়তা করেনি। মিল্কিওয়েতে এই কৃষ্ণগহ্বরকে বলা হচ্ছে ‘স্যাজিটেরিয়াস এ’। আমাদের সৌরজগতের সূর্যের থেকেও চার মিলিয়ন গুণ এটি বড়। একেবারে যেন দৈত্যাকার। তবে এটা বিশ্বের প্রথম কৃষ্ণগহ্বরের ছবি নয়। এর আগে ২০১৯ সালে তা প্রকাশ্যে এসেছে একবার। তবে সেবারে যে সৌরজগতের কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তুলে ধরা হয়, তা ৫৩ আলোকবর্ষ দূরে ছিল। সেই নিরিখে মিল্কিএয়ের কৃষ্ণগহ্বর খানিকটা আমাদের কাছে।
ইএইচটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক হেইনো ফাল্কে বলেছেন, এই নতুন চিত্রটি বিশেষ। কারণ এটি আমাদের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল।
ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর কী: এটি একটি মহাজাগতিক বস্তু যার ভর অত্যন্ত বেশি। এই অত্যন্ত বেশি ভরের কারণেই এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল এবং তার ফলেই আলোও এর আকর্ষণ এড়িয়ে যেতে পারে না।


