বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী মেলা আজ রোববার শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে সদরের কেল্লাপোশী এলাকায় ৪৬৯ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। এটি ‘জামাইবরণ’ মেলা নামেও পরিচিত।
জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে চার বছর এ আয়োজনে ভাটা পড়ে। সেই প্রভাব কেটে যাওয়ায় এবার মেলা ঘিরে গ্রামে গ্রামে চলছে রকমারি আয়োজন। উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় লাখো মানুষ। তারা প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
মেলা উপলক্ষে সবাই আত্মীয়স্বজনকে বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছেন। নিমন্ত্রণে জামাই-বউ রয়েছেন তালিকার শীর্ষে। শ্বশুরালয়ে আসা জামাই থাকেন ভিন্ন মৌজে। কারণ, মেলা করতে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের সেলামি। সেই সেলামি আর নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে তারা মেলা থেকে খাসি কিনে শ্বশুরবাড়িতে আনেন।
বড় বড় মাটির পাতিল ভর্তি করে মিষ্টান্ন, বড় মাছ, মহিষের মাংস, রকমারি খেলনা কেনেন। শ্যালক-শ্যালিকাকে নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে দেখেন। সার্কাস, নাগরদোলা, হোন্ডা ও জাদু খেলা, পুতুল নাচ দেখিয়ে দিনব্যাপী আনন্দ করেন। শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনাসামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন।
মেলা থেকে রকমারি মসলা, তুলা, কাঠের সামগ্রী, বড় বড় ঝুড়ি ও চুন সারা বছরের জন্য কিনে রাখেন গ্রামের মানুষ। কেল্লাপোশীতে তিন দিনব্যাপী মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। বিক্রেতারা নানা ধরনের পণ্য নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসেন।
এ আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ হলো কাঠের আসবাব, মিষ্টি-ফলমূল, বড় মাছ, কুটির শিল্পসামগ্রী, মহিষ ও খাসির মাংস এবং রকমারি মসলা। শেষ পর্যন্ত মেলা ছয়-সাত দিনে গড়ায়।
স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, কেল্লাপোশী মেলা ১৫৫৬ সাল থেকে হয়ে আসছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার মেলা চলাকালে ভক্তরা আসর বসান। মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে গ্রামে গ্রামে চলে মাদার বা লাঠিখেলা। বড় বাঁশ লাল
কাপড়ে মুড়িয়ে নানা রঙে সাজিয়ে এবং এর বিভিন্ন স্থানে চুল লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের দল বেরিয়ে পড়ে।
ঢাকঢোল, গানবাজনার নানান সরঞ্জাম আর লাঠি নিয়ে তারা গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরে খেলা দেখান। মেলা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে মাদার খেলা। জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার দলটি মেলা এলাকায় মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুদ্দিন বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ মেলা করতে কমিটির পক্ষ থেকে তিন দিনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন। মেলায় অশ্লীল নাচ-গান ও জুয়া খেলতে দেওয়া হবে না।
