অনেকেই বলেন, সারা জীবনে প্রথম প্রেমের স্মৃতি ভোলা যায় না। আবার কারও মতে প্রথম প্রেম কৈশোরের এক মোহ বৈ আর কিছু নয়। কোনটা সত্যি? এই উত্তর দিতে গিয়েই ৫ জন শোনালেন নিজেদের প্রথম প্রেমের গল্প।
আমরা নয়ের দশক, চিঠিতে কথা
“আমাদের প্রেমটা জমেছিল নয়ের দশকে। বাবা-মায়ের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে আমরা দেখা করতাম লুকিয়ে লুকিয়ে। কখনও স্কুলের পরে একসঙ্গে ফিরতাম সাইকেল চালিয়ে। কোনও কিছু বলার থাকলে চিঠি পাঠাতাম বন্ধুর হাত দিয়ে। তখন তো হোয়াটসঅ্যাপ-ফোনের চল ছিল না। আজও সেই রোমাঞ্চকে খুব মিস করি! জানি না, সেই মানুষটি কোথায় রয়েছে। কিন্তু তার স্মৃতি ভুলতে পারিনি।”
ওকে উত্তর দিতে পারিনি
“ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে এক সহপাঠীকে খুব ভালো লাগত। কিন্তু ও যেন আমাকে দেখলেই এড়িয়ে যেত। ওর এই ব্যবহারে আমি খুব কষ্ট পেতাম। রাগ করতাম। একদিন আমাদেরই এক বন্ধুর বাড়িতে সকলে মিলে পড়াশোনা করছিলাম। তখন সামনেই পরীক্ষা। দীর্ঘ সময় পড়ার জন্য়ে আমরা মাঝেমাঝে ব্রেকও নিতাম। এমনই এক ব্রেকে সবাই বাইরে ছিল। ঠিক তখনই ও আমার হাতটা ধরে বলল, ‘এত রাগ করিস কেন? কিছুই বুঝিস না?’ আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। আর কোনওদিন উত্তরটা ওকে জানাতে পারব কিনা, তাও জানি না। কারণ আমাদের আর যোগাযোগ নেই।”
রাতে এসএমএস পাঠাত
“‘মাধ্যমিকের বাধ্য মেয়ে’ ছিলাম আমি। তাই বাড়ি থেকে আমার হাতে কোনওদিন ফোনটাও দেয়নি। এদিকে স্কুলের এক সহপাঠীকে তখন খুব ভালো লাগত। কথা বলার উপায়ও ছিল না। শেষে মাকে পটিয়ে সপ্তাহে একটা দিন ফোনটা আদায় করতাম। রাত হলেই আমার সেই সহপাঠী এসএমএস পাঠাত। আমিও উত্তর দিতাম লুকিয়ে লুকিয়ে। সারা সপ্তাহ ওই রাতটার জন্যে অপেক্ষা করতাম। আজও কি সে কথা ভুলতে পেরেছি?”
বন্ধুকে ভোলা যায় কি?
চৈত্র মাসে স্কুলের পাশের পাঠে খুব বড় মেলা বসত। আমার স্কুলের বন্ধুরা সেই মেলায় যাওয়ার প্ল্যান করল। আমারও ওদের সঙ্গে মেলায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল বৈকি! আর হবে নাই বা কেন? সেই গ্রুপে যে আমার পছন্দের ছেলেটিও ছিল। আসলে এক বন্ধুকে মন দিয়েছিলাম কৈশোরে, কোনওদিন মুখ ফুটে বলতে পারিনি।
আমার মা বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় যাওয়ার অনুমতি দিল, কিন্তু শর্ত ছিল যে, রাত ৮টার আগেই বাড়ি ঢুকতে হবে। আমার তো কী আনন্দ! সবাই মিলে মেলার বড় নাগরদোলায় চড়লাম। নাগরদোলা যখন উপরে, প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে, দমকা হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের। ঠিক সেই সময়েই ওই বন্ধু আমার হাত ধরল। আজও চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে।
আমার দিকে তাকিয়ে হাসত
“বন্ধুর বোনকে খুব ভালো লাগত আমার। কিন্তু আমি তখন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র। সে কথা ওকে বলব কী ভাবে? এদিকে বন্ধুকেও সে কথা জানানো সম্ভব নয়। তাই সেই ক্লাস নাইনের মেয়েটি যখন স্কুল থেকে ফিরত, আমি ওর জন্যে রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতাম। শুধুই অপেক্ষা করতাম, কোনওদিন ডেকে কথা বলতে পারিনি। একদিন ও আমাকে দেখে হাসল। তারপর থেকে প্রতিদিনই আমাকে দেখে ও একবার হাসত। তারপরে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেত। দুই বছর এভাবেই কেটে গেল। তারপরে আমি পড়াশোনার জন্যে অন্য রাজ্যে চলে গেলাম। এখন শুধু জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠাই।”