কয়েক দশক ধরে, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের একটি দৃশ্য। মে মাসে শুরু হওয়া সর্বশেষ পুনরাবৃত্তিতে, কঙ্গোর সেনাবাহিনী এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে লড়াই করছে। একটি বিশাল এলাকা দখল করে রাখা গোষ্ঠীটি ২০১২-২০১৩ সালের বিদ্রোহের পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী আক্রমণ চালাচ্ছে।
আয়তন অনুসারে, বিশাল মধ্য আফ্রিকান দেশটি মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ এবং বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম দেশ।দেশটির খনিজ সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চল, শতাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণের জন্য কঙ্গোকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে তার কিছু নিকটবর্তী প্রতিবেশী – অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, রুয়ান্ডা এবং উগান্ডায় আক্রমণ শুরু করেছে।
ফলস্বরূপ, এটি এখন অসংখ্য কঙ্গো নাগরিকের মৃত্যু এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মাসে, নরওয়েজিয়ান শরণার্থী কাউন্সিল (ডিআরসি) এই পরিস্থিতিকে বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত শরণার্থী সংকট হিসাবে ঘোষণা করেছে। সহায়তা সংস্থাটি বলছে, অন্তত ৫ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং আরও এক মিলিয়ন বিদেশে পালিয়েছে।
কী হচ্ছে কঙ্গোতে?
- জাতিসংঘের সাম্প্রতিক গণনা অনুসারে, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চল কমপক্ষে ১২২ টি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াইয়ে জর্জরিত হয়েছে।
- এডিএফ, সিওডিইসিও, এম২৩ এবং মাই-মাই এই গোষ্ঠীগুলো রুয়ান্ডা এবং উগান্ডার সীমান্তবর্তী দুটি খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশ উত্তর কিভু এবং ইতুরিতে সবচেয়ে মারাত্মক তাণ্ডব চালিয়েছে।
- ২০২১ সালের ৬ মে, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি ওই দুই প্রদেশে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক গভর্নরদের নিয়োগ দিয়ে অবরোধের ঘোষণা করেন।
- তবে এখনও লড়াই অব্যাহত রয়েছে, এমনকি বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য শিবির এবং অন্যান্য বেসামরিক এলাকাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। ইউএনসিএইচআরের একটি বিবৃতি অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে জুগু অঞ্চলে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ক্যাম্পে হামলায় ৯৪ জন নিহত হয়েছিল।
- ইউএনএইচসিআর বলছে, সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহের লড়াইয়ে ৭২,০০০ এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
- ২৯শে মার্চ, উত্তর কিভুতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আটজন জাতিসংঘের সৈন্য মারা যায়। জাতিসংঘের একটি বিবৃতি অনুসারে ঘটনাটির কোনো ব্যাখ্যা তারা জানে না। তবে কঙ্গো এই ঘটনার জন্য এম২৩ কে দায়ী করেছে।
- কঙ্গো এবং রুয়ান্ডার সরকার এখন একে অপরকে বিভিন্ন সশস্ত্র এবং সামরিক গোষ্ঠীর উস্কানিকে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করছে।
- সম্প্রতি একজন কঙ্গোলিজ সৈন্যকে গুলি করে হত্যা করার পর, কঙ্গো রুয়ান্ডার সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
ভবিষ্যতে সেখানে কী হতে চলেছে?
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা পূর্ব কঙ্গোতে একটি আঞ্চলিক সামরিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে সহ আঞ্চলিক নেতাদের উপস্থিতিতে প্রস্তাবটি কার্যকরে সম্মত হয়েছে। শান্তি প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কঙ্গো এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে কিন্তু রুয়ান্ডার অংশগ্রহণ চায় না দেশটি। রুয়ান্ডার কিগালিতে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলন হওয়ার আগে, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কাগামে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট শিসেকেদির সাথে সংলাপ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে, মধ্য আফ্রিকান দেশটি চেষ্টা করছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বাকিটা সময় বলে দেবে। তবে, দেশটির সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। শীঘ্রই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।
সুত্র: আল-জাজিরা
এসআই


