’এমভি কারাভি ভেরেট’ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে ১৯৯৩ সালে। জাহাজে থাকা শতাধিক গাড়ি আমদানিকারকরা নিয়ে গেলেও তখন খালাস হয়নি শুধু একটি ট্রাক। ৩০ বছর সেই ট্রাক পড়ে ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের অকশন শেডে। ১৯৯৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খালাস না হওয়া এ রকম ১১০টি গাড়ির জঞ্জাল জমেছে ওই শেডে। সেখানে রয়েছে ট্রাক, প্রাইভেটকার, মিনিবাস, বাস, জিপ, লরি, প্রাইম মুভার ও ডাম্প পিকআপ। আছে সার, পচা মাংস, বিভিন্ন নষ্ট কাপড়, মেশিনারিজসহ অন্য জিনিসও। ৮৭৮ লটে এমন প্রায় ৪২১ টন পণ্যের তালিকা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব পণ্য ধ্বংস করা গেলে উন্মুক্ত হবে পাঁচ একর মূল্যবান জায়গা। এতে নতুন করে রাখা যাবে ৪ থেকে ৫ হাজার কনটেইনার। এ কর্মযজ্ঞ শেষ করতে পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকেও।
যেভাবে করা হবে ধ্বংস :নগরীর হালিশহরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের ময়লার স্তূপে অকশন শেডের ওই সব পচা ও নষ্ট পণ্য ফেলা হবে। কাভার্ডভ্যানে পচা পণ্যগুলো তুলে সিলসহ লক করে দিয়ে কাস্টমস আনসার দিয়ে গত বুধবার থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডাম্পিং স্টেশনে। সেখানে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশ, বিজিবি, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পণ্যগুলো ধ্বংস করা হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার অনুপম চাকমা বলেন, ‘বন্দরের ভেতরে জায়গা দখল করে থাকা অকশন শেডটি খালি করার ব্যাপারে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জোর দিয়েছেন। এটি খালি করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষও দীর্ঘদিন কাজ করছিল। এরই মধ্যে নতুন অকশন শেডও হয়েছে। অকশন শেডটি খালি করতে সেখানে থাকা ১১০টি পুরোনো গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে পচে-গেল যাওয়া ৮৭৮ লট পণ্য আছে আমাদের। এগুলো ধ্বংস করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘খালি হওয়া স্থানে আমরা নতুন করে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাজার কনটেইনার রাখতে পারব। আরও আগে কয়েক দফা এমন উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা জটিলতায় সফল হওয়া যায়নি।’
পাঁচবার চেষ্টা :অকশন শেড খালি করতে এর আগে অন্তত পাঁচ দফা চেষ্টা করেছে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দিয়েছে দফায় দফায় নোটিশও। নানা কারণে আর আলোর মুখ দেখছিল না এ উদ্যোগ। গত সেপ্টেম্বরেও অকশন শেডে থাকা পণ্যগুলোর পুনরায় ইনভেনট্রি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৪ মে কাস্টম হাউসের তৎকালীন নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে পুরোনো অকশন শেডে থাকা পণ্যের দাবিদার কিংবা নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতারা যাতে ৩০ দিনের মধ্যে তাঁদের পণ্য নিয়ে যান সেই নির্দেশনা ছিল। অন্যথায় ওই সব পণ্যের দাবিদার নেই ধরে নিয়ে পণ্যগুলোর বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। পণ্যগুলো শনাক্ত করতে তখন তালিকাও প্রকাশ করা হয়। অকশন শেডটি খালি করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস গত বছরের ১১ অক্টোবরও একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তখন বলা হয়, ‘পুরোনো অকশন শেডে থাকা বিভিন্ন পণ্যের নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সব লটের ইনভেনট্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুরোনো অকশন শেডে দীর্ঘদিনের বিভিন্ন মালপত্র ও গাড়ি রয়েছে। এর আগে কোনো নিলামে কোনো বিডার অংশগ্রহণ করে থাকলে অথবা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে এবং সংশ্নিষ্ট লট বা গাড়ির বিপরীতে কোনো আমদানিকারকের মামলা ও অন্য কোনো আদেশ থাকলে উপযুক্ত প্রমাণসহ সাত দিনের মধ্যে কাস্টমসের নিলাম শাখাকে অবহিত করুন। অন্যথায় ওই সব মালপত্রের কোনো দাবিদার নেই মর্মে বিবেচনা করে পণ্যের লটগুলো আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি করবে কাস্টমস।’ বারবার এমন ঘোষণা দেওয়া হলেও আইনি জটিলতায় তা আর সফল হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হস্তক্ষেপ করায় এবার বাধা উতরে গেছে।
নতুন অকশন শেড :অকশন শেডটি সরাতে কাস্টমসকে বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে ২৬ কোটি টাকা খরচায় সমপরিমাণ জায়গায় নতুন অকশন শেড নির্মাণ করে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান নতুন অকশনের শেডটি উদ্বোধন করেন। এর পর বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি চট্টগ্রাম কাস্টমসকে বুঝিয়ে দেয়। তবে গত সাত বছরেও পুরোনো অকশন শেডটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
পিএসএন/এমঅাই